বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ টিকার নিরাপত্তা বিষয়ক একটি বৃহত্তম গবেষণা মাঝপথেই বন্ধ হয়ে গেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া একগুচ্ছ তহবিল কর্তনের শিকার হয়ে এই গবেষণাটি নির্ধারিত সময়ের ১৩ মাস আগেই সমাপ্ত করতে বাধ্য হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
নিউজিল্যান্ডের গবেষক হেলেন পেটৌসিস-হ্যারিস এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টিভেন ব্ল্যাক ২০১৯ সালে ‘গ্লোবাল ভ্যাকসিন ডেটা নেটওয়ার্ক’ প্রতিষ্ঠা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় কয়েক কোটি মানুষের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে টিকাগুলোর কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা চালানো হয়।
অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থেকে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করে আসছিল। জানা গেছে, কোভিড টিকার নিরাপত্তা মূল্যায়নের জন্য নেওয়া পাঁচ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) ১০ মিলিয়নের বেশি নিউজিল্যান্ড ডলার (NZD) বিনিয়োগ করেছিল।
কিন্তু সম্প্রতি ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ নামক একটি সংস্থার তহবিল পর্যালোচনার পর গবেষণাটি শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন হেলেন পেটৌসিস-হ্যারিস।
এই নেটওয়ার্ক মূলত কোটি কোটি মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে টিকার কার্যকারিতা যাচাই করে, ঝুঁকি ও সুবিধাগুলো মূল্যায়ন করে এবং টিকা নিয়ে মানুষের দ্বিধা দূর করতে সহায়তা করে।
হেলেন পেটৌসিস-হ্যারিস বলেন, “এ ধরনের কাজ করার জন্য বিশাল সংখ্যক মানুষের ডেটা এবং গবেষণার ক্ষমতা প্রয়োজন।” তিনি আরও জানান, “কোনো প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই, কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই” কোভিড টিকার নিরাপত্তা বিষয়ক প্রকল্পের অর্থায়ন হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সরকারি বিভাগ এবং গবেষণা ও সাহায্য কর্মসূচিগুলোতে বড় ধরনের কাটছাঁট করা হয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রকল্পে প্রভাব ফেলেছে। ১ এপ্রিল, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, যেমন সিডিসি, খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ-এর প্রায় ১০ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন।
সিডিসি-র তহবিল কমানোর ফলে শুধু যে ডেটা নেটওয়ার্কের কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নয়, এর ফলে বিজ্ঞান, বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান এবং বিজ্ঞানীদেরও দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন হেলেন পেটৌসিস-হ্যারিস।
তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী গবেষণা খাতে ট্রাম্প প্রশাসনের এমন বিশাল পরিমাণ অর্থ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বর্ণনা করা কঠিন।”
গবেষণাটি সম্পন্ন করতে আরও প্রায় ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ আশা করছে, কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা এই অর্থ দিয়ে তাদের সহায়তা করবে।
এদিকে, এমন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টিকা সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়ছে। হেলেন পেটৌসিস-হ্যারিস বলেন, “আমরা দেখেছি, মহামারী চলাকালীন সময়ে এটা আরও বেড়েছে। বর্তমানে এই গবেষণা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টিকা সম্পর্কে বিভিন্ন ভুল ধারণা ছড়ানোর পথ আরও সুগম হবে।”
অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যিক শাখা ‘ইউনিসার্ভিসেস’, যারা এই গবেষণা প্রকল্পের মতো বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রমকে সহায়তা করে থাকে, তারাও প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ইউনিসার্ভিসেসের নির্বাহী পরিচালক ড. গ্রেগ মুরিজন বলেন, “সম্প্রতি সিডিসি আমাদের জানিয়েছে যে, প্রকল্পের জন্য তাদের তহবিল অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমরা এখন টিকা নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণার জন্য ২০১৪ সাল থেকে সংগ্রহ করা ডেটা ও অন্যান্য উপকরণ সুরক্ষিত করার চেষ্টা করছি।”
নেটওয়ার্কটি তাদের শুরু থেকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক ফলাফল প্রকাশ করেছে এবং তাদের অন্যান্য কিছু প্রকল্প পৃথকভাবে অর্থায়িত হওয়ায় সেগুলো চলমান থাকবে। নিউজিল্যান্ড স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা গবেষণাটির অর্থায়ন বন্ধের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত আছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান