চারিদিকে কেন দেখা যাচ্ছে কাউবয়দের? চমকে যাওয়ার মতো কারণ!

শিরোনাম: কেন চারিদিকে `কাউবয়’দের এত আনাগোনা? পশ্চিমা সংস্কৃতি কি আবার ফিরছে?

পশ্চিমা বিশ্বে কাউবয়দের পোশাক, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রা এখন ফ্যাশন ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ফ্যাশন ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন, সিনেমা এমনকি রাজনৈতিক আলোচনাতেও কাউবয়দের ছবি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কেন এই দৃশ্য? এই পরিবর্তনের কারণ কী?

যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতির সঙ্গে কাউবয়দের সম্পর্ক বহু পুরোনো। কঠোর পরিশ্রমী, পুরনো দিনের এবং দৃঢ়চেতা আমেরিকান পুরুষত্বের প্রতীক হিসেবে তারা পরিচিত। সম্প্রতি এই কাউবয় সংস্কৃতির পুনরুত্থান সম্ভবত দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলন। ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক সদস্য এবং রক্ষণশীলদের মধ্যে কাউবয় টুপি ও এই ধরনের ছবি ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায়।

ঐতিহাসিক দিক থেকে দেখলে, ১৮৮০-এর দশকে বাফেলো বিলের “ওয়াইল্ড ওয়েস্ট” শো-এর মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বের ধারণা মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়। এরপর পশ্চিমা সিনেমাগুলোর মাধ্যমে এই সংস্কৃতি আরও পরিচিতি লাভ করে। সিনেমায় কাউবয়দের দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা তাদের আমেরিকান পরিচয়কে আরও দৃঢ় করেছে। তবে, এই চিত্রের একটি ভিন্ন দিকও রয়েছে। কাউবয় সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত কঠোর পরিশ্রম, কম বেতন এবং কঠিন জীবনযাত্রা সাধারণত ছবিতে তুলে ধরা হয় না।

ফ্যাশন ফটোগ্রাফার রিচার্ড অ্যাভেডন ১৯৮৫ সালে আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলের একটি বিখ্যাত ছবি সিরিজ তৈরি করেন। টেক্সাস থেকে শুরু করে ইডাহো পর্যন্ত ১৭টি রাজ্যে ঘুরে তিনি সেখানকার মানুষের ছবি তোলেন। অ্যাভেডনের ছবিগুলো পশ্চিমা বিশ্বের রোমান্টিক ধারণার পরিবর্তে দারিদ্র্য ও সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরেছিল।

১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে, ক্লিনটন প্রশাসনের সময় “পিসি কালচার” (রাজনৈতিকভাবে সঠিক সংস্কৃতি)-এর বিরোধিতা শুরু হয়েছিল। অনেকে মনে করেন, জর্জ ডব্লিউ বুশের টেক্সাসের আঞ্চলিকতা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি মনোযোগ এই পরিবর্তনের কারণ। এই সময়ে কাউবয় পোশাকের জনপ্রিয়তা বেড়েছিল, যা শহুরে সংস্কৃতির একটি বিপরীত চিত্র তৈরি করে।

বর্তমানে, কাউবয় সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে ফ্যাশন এবং ব্যবসার অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, Zara-র একটি বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, আরিজোনার মরুভূমিতে কাউবয় বুট ও টুপি পরে কয়েকজন মেয়ে নাচছে। এই ধরনের চিত্রগুলো ঐতিহ্যবাহী আমেরিকান মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, যা সততা, কঠোর পরিশ্রম, ঈশ্বর-ভক্তি এবং শ্রদ্ধাবোধের সঙ্গে সম্পর্কিত।

তবে, এই জনপ্রিয় চিত্রের একটি ভিন্ন দিকও রয়েছে। এই সংস্কৃতিতে আদিবাসী আমেরিকান, মেক্সিকান এবং ক্রীতদাস হওয়া আফ্রিকান-আমেরিকানদের অবদানকে সাধারণত উপেক্ষা করা হয়। সম্প্রতি, কৃষ্ণাঙ্গ কাউবয়দের নিয়ে আলোচনা বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে প্যারিস ফ্যাশন উইকে লুই ভিতোঁর ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ফ্যারেল উইলিয়ামস আমেরিকান সীমান্তের বৈচিত্র্যকে তুলে ধরে পোশাক প্রদর্শন করেন।

ওকল্যান্ড ব্ল্যাক কাউবয় অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট কার্ক বেইলির মতে, কাউবয় সংস্কৃতি এবং এর মধ্যেকার বৈচিত্র্য সম্পর্কে মানুষ যত বেশি জানবে, তাদের আগ্রহ তত বাড়বে। তার মতে, এই আগ্রহ সহজে শেষ হওয়ার নয়।

রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং জনপ্রিয় মিডিয়া কাউবয়দের চিত্রকে ব্যবহার করে আসছে, যা আমেরিকান সমাজের কল্পনার ওপর এর প্রভাব প্রমাণ করে। যদিও এটি বাস্তব কাউবয়দের ইতিহাসের সঠিক প্রতিফলন নয়, তবে এর বাণিজ্যিক ব্যবহার আমেরিকান ঐতিহ্যের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *