মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি অচলাবস্থার কারণে অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে এক ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যেই আসন্ন সেপ্টেম্বরের ভোক্তা মূল্য সূচক (Consumer Price Index – CPI) নিয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ হতে যাচ্ছে, যা দেশটির অর্থনীতির গতি প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা দেবে।
এই প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিসটিকস (Bureau of Labor Statistics – BLS) জানিয়েছে যে, সেপ্টেম্বরের সিপিআই প্রতিবেদনটি খুব শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে। এই সূচক তৈরি হয় মূলত বিভিন্ন পণ্যের দামের গড় হিসাবের মাধ্যমে।
সাধারণত, এই সূচকের ভিত্তিতেই সামাজিক নিরাপত্তা পরিশোধের মতো বিষয়গুলো নির্ধারিত হয়। বর্তমানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।
কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, সেপ্টেম্বরের রিপোর্টে দেখা যাবে মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, মূল্যবৃদ্ধির হার ২.৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩.১ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো গ্যাস, খাদ্যদ্রব্য এবং শুল্ক-প্রভাবিত পণ্যের দাম বৃদ্ধি।
এছাড়া, পরিষেবা খাতেও মূল্যস্ফীতি কমার গতি প্রত্যাশার চেয়ে কম। উদাহরণস্বরূপ, খাদ্যপণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
বিশেষ করে গরুর মাংস, কোকো এবং কফির মতো কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে, যা সরাসরি ভোক্তাদের ওপর প্রভাব ফেলছে।
যেহেতু বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে, তাই এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যবৃদ্ধির এই চাপ সমাজের বিভিন্ন স্তরে ভিন্নভাবে অনুভূত হচ্ছে। একদিকে, উচ্চ আয়ের মানুষেরা হয়তো এই পরিস্থিতি সহজে মোকাবিলা করতে পারছেন।
শেয়ার বাজার এবং অন্যান্য খাতে তাদের আয় বাড়ছে। অন্যদিকে, মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষেরা খাদ্য ও বিদ্যুতের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ার কারণে চাপে পড়ছেন।
এই পরিস্থিতিকে ‘কে-শেপড ইকোনমি’ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে, যেখানে সমাজের কিছু অংশ দ্রুত উন্নতি করছে, আবার অন্যরা পিছিয়ে পড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে, তা আমাদের আমদানি খরচ বাড়িয়ে দেয়।
এর ফলে, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে।
এছাড়া, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যের পরিবর্তনও আমাদের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে।
অতএব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির এই প্রবণতা আমাদের সতর্ক থাকতে শেখায়।
আমাদের নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে বিশ্ব অর্থনীতির গতিবিধির দিকে নজর রাখা এবং দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
একইসঙ্গে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
তথ্যসূত্র: CNN