বদলে যাওয়া ক্রিকেটে মিডিয়াম পেসারদের বিদায় ঘণ্টা?

ক্রিকেটের জগতে, বিশেষ করে ফাস্ট বোলিংয়ের ক্ষেত্রে, সবসময়ই গতির একটা আলাদা কদর রয়েছে। ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার বেগে আসা একটা বল ব্যাটসম্যানের কাছে সাক্ষাৎ ত্রাস হয়ে দেখা দেয়, এবং সেই ভয়ে অনেক সময় ভালো ভালো ব্যাটসম্যানও উইকেট হারান।

তবে ক্রিকেটের ইতিহাসে সবসময়ই যে শুধু গতির জয়জয়কার হয়েছে, তা কিন্তু নয়। বরং, এমন কিছু বোলার ছিলেন, যারা গতির চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন লাইন, লেংথ ও বলের সামান্য পরিবর্তনে, আর তাঁদের এই কৌশলই ছিল সাফল্যের চাবিকাঠি।

ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই এক বিরল প্রজাতির বোলারের কথা, যাঁদের এখন প্রায় দেখাই যায় না— ‘মিডিয়াম পেসার’।

নব্বইয়ের দশক এবং দুই হাজারের শুরুতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই মিডিয়াম পেসারদের দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো।

নিউজিল্যান্ডের ক্রিস হ্যারিস, নাথান অ্যাস্টল, স্টিফেন ফ্লেমিং এবং স্কট স্টাইরিসের মতো খেলোয়াড়েরা ছিলেন এই ধারার অগ্রদূত। তাঁদের বোলিংয়ের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল, উইকেটের কাছাকাছি বল ফেলে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করা।

মিডিয়াম পেসাররা সবসময়ই ব্যাটসম্যানদের রান করার সুযোগ কম দিতেন, ফলে তাঁদের বিরুদ্ধে রান করাটা বেশ কঠিন ছিল। এমনকি সৌরভ গাঙ্গুলী, স্টিভ ওয়া এবং ফিল সিমন্সের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটাররাও এই ঘরানার বোলারদের সামলাতে বেশ বেগ পেতেন।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ক্রিকেটের ধরনে এসেছে পরিবর্তন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আগমন এবং আধুনিক ব্যাটসম্যানদের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে মিডিয়াম পেসারদের কদর অনেকটাই কমে গেছে।

এখনকার দিনে ব্যাটসম্যানরা দ্রুত রান তোলার দিকে বেশি মনোযোগ দেন, ফলে মিডিয়াম পেসারদের জন্য তাঁদের লাইন ও লেংথ বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়াও, বাউন্ডারি বাঁচানোর জন্য ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতা এবং উন্নতমানের ব্যাট ব্যবহারের ফলে বোলারদের কাজ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন ভালো ফাস্ট বোলারের গড় গতি ঘণ্টায় অন্ততপক্ষে ১২৫ কিলোমিটার হওয়া উচিত। পাকিস্তানের মোহাম্মদ আব্বাস, যিনি ঘণ্টায় প্রায় ১২৬ কিলোমিটার গতিতে বল করেন, এই মাপকাঠিতে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও, তাঁর বোলিংয়ে গতির চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় নিঁখুত লাইন ও লেংথের ওপর।

জেসন হোল্ডার এবং ভারনন ফিল্যান্ডারও তাঁদের সুইং এবং সিম বোলিংয়ের জন্য পরিচিত, এবং তাঁরাও এই মিডিয়াম পেসারদের দলে পড়েন। তবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন তাঁদের সংখ্যা খুবই কম।

তাহলে কোথায় গেলেন এই মিডিয়াম পেসাররা? এর প্রধান কারণ হলো, ক্রিকেটে গতির গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া।

ফাস্ট বোলাররা এখন অনেক বেশি প্রভাবশালী, কারণ তাঁদের গতির কারণে ব্যাটসম্যানদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি হয়। মিডিয়াম পেসারদের সেই সুবিধাটা নেই।

তবে, এখনো এমন একটি জায়গা আছে, যেখানে এই মিডিয়াম পেসাররা তাঁদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারেন। সেটি হলো কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ।

এখানে ডারেন স্টিভেন্সের মতো খেলোয়াড়েরা এখনো তাঁদের পুরনো দিনের মতো বল করে যাচ্ছেন। ডারেন স্টিভেন্সের কথা যদি বলি, তিনি তাঁর দীর্ঘ ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রায় ৩১,৫৯৫টি বল করেছেন, যা তাঁর নিপুণ বোলিংয়ের প্রমাণ।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে অবশ্য মিডিয়াম পেসারদের খুব একটা দেখা যায় না।

আমাদের ফাস্ট বোলিংয়ের ঐতিহ্য থাকলেও, মিডিয়াম পেসারদের সেভাবে তৈরি করা হয়নি। তবে, ঘরোয়া ক্রিকেটে এই ধরনের বোলারদের আরও বেশি সুযোগ দেওয়া হলে, হয়তো ভবিষ্যতে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো ফল করতে পারব।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *