বিশ্ব ক্রিকেটে পরিবর্তনের হাওয়া, খেলোয়াড়দের সংগঠন নতুন কাঠামো চাইছে।
ক্রিকেট বিশ্বে প্রায়ই শোনা যায়, খেলার সূচি নিয়ে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। এবার সেই বিষয়ে মুখ খুলল ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন (WCA)।
তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (ICC) বর্তমান ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার দাবি জানিয়েছে।
খেলোয়াড়দের এই সংগঠনটি ক্রিকেটের ক্যালেন্ডার ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে গুরুত্ব পাবে ‘নেশনস লিগ’-এর মতো একটি কাঠামো।
এই পরিবর্তনের ফলে খেলা আরো আকর্ষণীয় হবে এবং ক্রিকেটের উন্নতি ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমান সূচি খেলোয়াড়দের জন্য বেশ কঠিন ও বিভ্রান্তিকর।
তাদের মতে, আইসিসি’র কার্যকারিতা বাড়ানো দরকার এবং বিশ্ব ক্রিকেটের নেতৃত্ব আরও সুসংহত করতে হবে।
এই লক্ষ্যে একটি নতুন ‘গ্লোবাল লিডারশিপ কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট বোর্ড, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ এবং খেলোয়াড়দের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
WCA-এর প্রধান প্রস্তাবগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোর বিন্যাস পরিবর্তন করা।
তারা উয়েফা নেশনস লিগের আদলে একটি কাঠামো তৈরি করতে চায়।
যেখানে দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোর পরিবর্তে একটি প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা থাকবে, যা প্রতিটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের গুরুত্ব বৃদ্ধি করবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, দলগুলোকে তিনটি প্রধান ফরম্যাটে (টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি) আটটি পর্যন্ত বিভাগে ভাগ করা হবে।
প্রতিটি বিভাগের দলগুলো একটি দুই বছরের চক্রে অন্তত একবার একে অপরের সাথে খেলবে।
এই কাঠামোর মাধ্যমে দলগুলোর মধ্যে উন্নতি, অবনতি এবং বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ থাকবে।
বর্তমানে চলমান বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে WCA।
তাদের মতে, দলগুলো সব সময় একে অপরের সাথে খেলে না, যার ফলে স্কোরিং পদ্ধতিতে জটিলতা তৈরি হয়।
ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের অধিনায়ক বেন স্টোকসও এই পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন।
শুধু খেলার সূচি নয়, আর্থিক বিষয় নিয়েও কথা বলেছে WCA।
তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, আইসিসি’র আয়ের একটি অংশ বণ্টনে পরিবর্তন আনা দরকার।
বর্তমানে, ভারতের ক্রিকেট বোর্ড আইসিসি’র মোট আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ পায়।
এছাড়া, দ্বিপাক্ষিক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আয়ের ৮৭ শতাংশই যায় ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর কাছে।
WCA চাইছে, প্রতিটি দেশের আয়ের ভাগ ১০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
এমনকি, ছোট দলগুলোও যেন ২ শতাংশ অর্থ পায়, সেই প্রস্তাবও তাদের তালিকায় রয়েছে।
সংগঠনটি মনে করে, বর্তমান কাঠামো বড় দেশগুলোর সুবিধা দিলেও, তা ক্রিকেটের সামগ্রিক বিকাশে বাধা দেয়।
তাদের মতে, একটি ন্যায্য ও সুষম ব্যবস্থা খেলাটির উন্নতি ঘটাবে এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে আরও বেশি প্রতিযোগিতা তৈরি করবে।
খেলোয়াড়দের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও তারা পরিবর্তন চেয়েছেন।
বর্তমানে, খেলোয়াড়দের অন্য কোনো দেশের টুর্নামেন্টে খেলার অনুমতি দেয় স্ব স্ব দেশের ক্রিকেট বোর্ড।
WCA চাইছে, এক্ষেত্রে একটি ‘বাধ্যতামূলক খেলোয়াড় মুক্তি প্রক্রিয়া’ চালু করা হোক।
এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের ক্রিকেটে কেমন প্রভাব পড়বে, সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
তবে, খেলাগুলোর আকর্ষণ বাড়লে এবং আর্থিক দিক থেকে লাভবান হলে, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ইতিবাচক হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান