বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের সরবরাহ কমে আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (IEA) -এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রয়োজনীয় খনিজগুলোর উত্পাদন এবং পরিশোধনের সিংহভাগ এখন কয়েকটি দেশের হাতে কুক্ষিগত হয়ে পড়েছে, যার মধ্যে চীন অন্যতম।
এই পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ, কারণ সরবরাহ ব্যাহত হলে শিল্পখাতে সংকট তৈরি হবে এবং ভোক্তাদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
IEA-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তামা, লিথিয়াম, কোবাল্ট, গ্রাফাইট এবং বিরল মৃত্তিকা উপাদানসহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলির ক্ষেত্রে শীর্ষ তিনটি উত্পাদনকারী দেশের গড় বাজার হিস্যা ২০২০ সালের ৮২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে হয়েছে ৮৬ শতাংশ। এর মধ্যে চীন একাই ১৯টি কৌশলগত খনিজ পদার্থের পরিশোধন করে থাকে, যার গড় হিস্যা প্রায় ৭৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রপ্তানি বিধিনিষেধ এবং বাণিজ্য বিরোধের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। আইইএ-এর নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরোল বলেছেন, “গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবরাহ শৃঙ্খল চরম আবহাওয়া, প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা বাণিজ্য বাধার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এর ফলে ভোক্তাদের জন্য জিনিসপত্রের দাম বাড়বে এবং শিল্পখাত প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে.” তিনি উদাহরণ হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রসারে এই খনিজগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। উদাহরণস্বরূপ, বৈদ্যুতিক তার এবং বিদ্যুতের গ্রিডের জন্য অপরিহার্য তামা সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
আইইএ সতর্ক করে বলেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ তামার উত্পাদন চাহিদার তুলনায় ৩০ শতাংশ কম হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, সরবরাহ ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারগুলোকে সক্রিয় হতে হবে।
এই খনিজগুলোর অভাব শুধু উন্নত বিশ্বকে নয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও প্রভাবিত করবে। বাংলাদেশও বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্য এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরঞ্জামের জন্য আমদানি-নির্ভরশীল।
সুতরাং, বিশ্ববাজারে খনিজ পদার্থের দাম বাড়লে, দেশের অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়বে। তাই, সরবরাহ ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখতে এবং বাজারের অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকারের উপযুক্ত নীতি গ্রহণ করা জরুরি।
এই পরিস্থিতিতে, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বিকল্প সরবরাহ উৎস খুঁজে বের করতে এবং স্থানীয়ভাবে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক বাজারে দর কষাকষির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (IEA)