একটি নতুন গল্পের খোঁজে: ক্রোয়েশিয়ার ‘ফিয়াকা’ – যেখানে কর্মহীনতাই এক প্রকার শিল্প
ছুটির দিনে আরাম করার ধারণাটা একেকজনের কাছে একেক রকম। কারো কাছে সেটা হয়তো পাহাড়ের চূড়ায় ট্রেকিং করা, আবার কারো কাছে সমুদ্রের ধারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বই পড়া। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার মানুষের কাছে ‘ফিয়াকা’ যেন এক ভিন্ন ধরনের শিল্প। ‘ফিয়াকা’ মানে হলো—কিছু না করা।
একেবারে চুপচাপ, নিস্তব্ধভাবে সময় কাটানো। সম্প্রতি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি প্রতিবেদনে এই ‘ফিয়াকা’র সন্ধান পাওয়া গেছে।
ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত ক্রোয়েশিয়া দেশটি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। দেশটির ডালমেশিয়ান অঞ্চলে এই ‘ফিয়াকা’র ধারণাটির জন্ম।
এই অঞ্চলের মানুষজন তাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করে উপভোগ করতে ভালোবাসে। সেখানকার বাসিন্দারা দিনের পর দিন যেন এক ধরণের অলসতা উপভোগ করেন।
তাদের কাছে এই ‘কিছু না করার’ মধ্যেই লুকিয়ে আছে আসল আনন্দ।
এই অনুসন্ধানের জন্য লেখক পাড়ি জমিয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়ার লাস্টোভো দ্বীপে। ভিস দ্বীপের পরেই লাস্টোভো ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় জনমানবশূন্য দ্বীপ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এই দ্বীপটি দীর্ঘদিন জনসাধারণের জন্য বন্ধ ছিল। বর্তমানে এটি একটি প্রকৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
এখানে প্রকৃতির নীরবতা যেন অন্যরকম, যা ‘ফিয়াকা’ উপভোগ করার জন্য আদর্শ।
দ্বীপের একমাত্র শহর লাস্টোভো-তে পুরোনো পাথরের বাড়িগুলো আজও যেন অতীতের গল্প বলে। এখানকার বাসিন্দারা তাদের দৈনন্দিন জীবন কাটান শান্ত ও স্নিগ্ধ পরিবেশে।
পর্যটকদের জন্য এখানে তেমন কোনো আকর্ষণ নেই—একটি সাধারণ মানের হোটেল, কয়েকটি রেস্টুরেন্ট আর কায়াকিং অথবা বাইকিং-এর ব্যবস্থা রয়েছে।
পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লেও লাস্টোভোতে এখনো এক ধরণের নির্জনতা বিদ্যমান। এখানে সাঁতার কাটা, বই পড়া অথবা প্রকৃতির নীরবতা উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ‘ফিয়াকা’ আসলে মনের একটা অবস্থা। কোনো চিন্তা নেই, শুধু সময় বয়ে যাওয়া।
এখানকার প্রকৃতি এতটাই শান্ত যে, মাঝে মাঝে মনে হয়, সময় যেন এখানে থমকে দাঁড়িয়ে আছে।
লাস্টোভোতে নৌকাবিহারের অভিজ্ঞতাও অসাধারণ। এখানকার স্থানীয় জেলে ইভিকা লেসিচের সাথে লেখক এক নৌকাবিহারে অংশ নেন।
তারা দ্বীপের চারপাশে ঘুরে বেড়ান, টাটকা মাছ ধরেন এবং প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করেন।
এরপর তারা একটি নির্জন উপসাগরে নৌকরেরা বিশ্রাম নেন, যেখানে তাজা মাছ ভাজা হয়, স্থানীয়ভাবে তৈরি করা জলপাই তেল ও রুটি দিয়ে দুপুরের খাবার উপভোগ করা হয়।
ইভিকা জানান, এই দ্বীপে ‘ফিয়াকা’র অনুভূতি অনেকটা দুপুরের খাবারের পর হালকা ঘুমের মতো।
প্রতি বছর লাস্টোভোতে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। দ্বীপটিতে নতুন হোটেল তৈরিরও পরিকল্পনা চলছে।
তবে, স্থানীয়দের মনে এই বিষয়ে দ্বিধা রয়েছে। তারা চান, দ্বীপের এই শান্ত পরিবেশ বজায় থাকুক। ‘ফিয়াকা’র ধারণাটি যেন তাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকে।
ইভিকা বলেন, “লাস্টোভো আসলে বিশেষ কিছু নয়—এটা হলো সরলতা আর মুক্তি। লাস্টোভোকে ভালোবাসতে হলে, শুধু এখানে থাকতে হয়।”
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক