আতঙ্কের গল্প: কেন আজও ‘ক্রুসিবল’ প্রাসঙ্গিক?

আর্থার মিলারের বিখ্যাত নাটক ‘দ্য ক্রুসিবল’ আজও কেন আমাদের মনে আতঙ্ক জাগায়, সেই বিষয়ে একটি নতুন নিবন্ধ লিখছি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত নাট্যকার আর্থার মিলারের কালজয়ী সৃষ্টি ‘দ্য ক্রুসিবল’ আজও প্রাসঙ্গিক, কারণ এটি মানুষের মধ্যে ভয়, সন্দেহ, এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের চিরন্তন চিত্র তুলে ধরে। ১৬৯২ সালে সালেমের ডাইনি শিকারের প্রেক্ষাপটে লেখা এই নাটকটি আসলে ১৯৫০-এর দশকের আমেরিকার রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং কমিউনিস্ট বিরোধী মানসিকতার প্রতিচ্ছবি।

সম্প্রতি নাটকটির বিভিন্ন মঞ্চায়ন আবারও প্রমাণ করে, কেন এটি আজও গুরুত্বপূর্ণ।

‘দ্য ক্রুসিবল’-এর মূল বিষয়বস্তু হলো, সমাজে যখন ভয় ও উদ্বেগের পরিবেশ তৈরি হয়, তখন কীভাবে সামান্য সন্দেহের বশেও মানুষকে অভিযুক্ত করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া হয়। নাটকে দেখা যায়, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে মিথ্যা অভিযোগের আশ্রয় নেয়, যা নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়।

এই বিষয়টি বর্তমান সময়েও বিভিন্ন রূপে দেখা যায়, যখন ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হয় এবং ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়।

নাটকটির প্রধান চরিত্র জন প্রোক্টর, যিনি সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে সমাজের ভণ্ডামির বিরুদ্ধে লড়াই করেন। এই চরিত্রে সমাজের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়, যেখানে কিছু মানুষ তাদের সম্মান ও স্বার্থ রক্ষার জন্য মিথ্যাকে আশ্রয় নেয়।

প্রোকটরের চরিত্রটি সবসময়ই দর্শকদের কাছে অনুপ্রেরণা যোগায়, যারা অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চান।

বিভিন্ন সময়ে ‘দ্য ক্রুসিবল’-এর মঞ্চায়ন হয়েছে, যা দর্শকদের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে। যেমন, ২০০২ সালে রিচার্ড এয়ারের ব্রডওয়ে প্রযোজনা এবং ২০১৬ সালে ডমিনিক কুকের আরএসসি প্রযোজনা উল্লেখযোগ্য।

প্রতিটি প্রযোজনাতেই নাটকের বিষয়বস্তু নতুনভাবে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি লন্ডনের শেক্সপিয়ারের গ্লোবে নাটকটির একটি নতুন প্রযোজনা শুরু হয়েছে, যা ৮ মে থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত চলবে।

বর্তমান বিশ্বে যখন ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হচ্ছে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার বাড়ছে, তখন ‘দ্য ক্রুসিবল’-এর মতো নাটকগুলো আমাদের আরও বেশি প্রাসঙ্গিক মনে হয়। এই নাটকগুলো শুধু অতীতের ঘটনা নয়, বরং বর্তমানের প্রতিচ্ছবিও।

তবে, এই ধরনের নাটকগুলো শুধুমাত্র আমেরিকান প্রেক্ষাপটে সীমাবদ্ধ না রেখে ইউরোপীয় নাটকের দিকেও আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত। কারণ, ইউরোপীয় নাটকেও সমাজের বিভিন্ন দিক, যেমন- রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক অবিচার, এবং মানুষের ভেতরের দ্বন্দ্ব- এসব বিষয় গভীর ভাবে তুলে ধরা হয়।

সবশেষে, ‘দ্য ক্রুসিবল’ একটি শক্তিশালী নাটক, যা আমাদের সমাজের অন্ধকার দিকগুলো যেমন দেখায়, তেমনি ন্যায় ও সত্যের পথে চলতে উৎসাহিত করে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *