গডলি অ্যান্ড ক্রেমের যুগান্তকারী ‘ক্রাই’ গানের ভিডিও নির্মাণের পেছনের গল্প
১৯৮০-এর দশকে মিউজিক ভিডিওর জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল গডলি অ্যান্ড ক্রেমের ‘ক্রাই’ গানটি। গানের চেয়েও বেশি আলোচনা হয়েছিল এর ভিডিওটি নিয়ে, যা ছিল তখনকার সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
মুখের অবয়ব পরিবর্তনের এক অত্যাধুনিক কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল এই ভিডিওতে, যা দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছিল। আসুন, সেই ভিডিও নির্মাণের পেছনের গল্প শুনি।
ভিডিওটির নির্মাণ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে গডলি অ্যান্ড ক্রেমের অন্যতম সদস্য কেভিন গডলি জানান, তাঁরা সবসময়ই চেয়েছেন তাঁদের কাজ যেন দর্শকদের কাছে অন্যরকম হয়। শিল্পীসত্তার পরিচয় দিতে চেয়ে তাঁরা ভিজ্যুয়াল আইডিয়াকে গুরুত্ব দিতেন।
গানের কথা লেখার পাশাপাশি তাঁরা ভিজ্যুয়াল কনসেপ্টের ওপরেও জোর দিতেন।
ভিডিওটি তৈরির মূল ধারণা আসে যখন তাঁরা প্রথমে ‘অ্যান ইংলিশম্যান ইন নিউ ইয়র্ক’ গানটির জন্য একটি শর্ট ভিডিও তৈরি করেন। এরপর ভিসেজ-এর স্টিভ স্ট্রেঞ্জের ‘ফেড টু গ্রে’ ভিডিওটি বানানোর পর তাঁদের কাছে দুরান দুরান ও হার্বি হ্যানককের মতো শিল্পীরাও ভিডিও বানানোর প্রস্তাব নিয়ে আসেন।
তাঁদের মতে, এই মাধ্যমটি ছিল খুবই আকর্ষণীয়।
প্রযোজক ট্রেভর হর্নের সঙ্গে তাঁদের কাজের শুরুটা হয় নিউইয়র্কে, যখন তাঁরা একটি কনসার্টের ফিল্ম সম্পাদনা করছিলেন। হর্ন তখন তাঁদের সঙ্গে একটি গান তৈরির প্রস্তাব দেন।
প্রথমে ‘হিট দ্য বক্স’ নামে একটি গান তৈরির পরিকল্পনা করা হয়, কিন্তু যুক্তরাজ্যের প্রেক্ষাপটে সেটি সম্ভব ছিল না। পরে তাঁরা ১৫ বছর আগে লেখা একটি গানের প্রথম কয়েকটি লাইন ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন।
গানটির প্রথম লাইন ছিল, “ইউ ডোন্ট নো হাউ টু ইজ মাই পেইন”। ট্রেভর হর্নও গানটি পছন্দ করেন।
গানটির রেকর্ডিংয়ের সময় ট্রেভর হর্নের দল এক নতুন ধরনের শব্দ তৈরি করতে শুরু করে। কেভিন গডলি জানান, তাঁরা ২০ সেকেন্ডের একটি ট্র্যাক তৈরি করে টেবিলে বসে গল্প করছিলেন, আর তাঁদের কারিগররা সেটিকে সুন্দর একটি শব্দে পরিণত করেন।
লল ক্রেমি কিছু সুর যোগ করেন এবং গডলিকে গানটি গাওয়ার জন্য বলা হয়। গানের কথাগুলো ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, কিন্তু তাঁরা জানতেন, এটি বিশেষ কিছু হতে যাচ্ছে।
ভিডিও তৈরির পরিকল্পনা করতে গিয়ে প্রথমে তাঁরা বিখ্যাত ব্রিটিশ আইস স্কেটিং জুটি টরভিল ও ডিনকে এই ভিডিওতে যুক্ত করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সময়ের অভাবে তা সম্ভব হয়নি।
এরপর তাঁরা একটি কাস্টিং বুক থেকে অনেক মুখ বেছে নিয়ে তাঁদের গান গাওয়ার দৃশ্য ধারণ করেন। এই ভিডিওর প্রধান আকর্ষণ ছিল ‘ওয়াইপস’ নামক একটি কৌশল, যার মাধ্যমে একটি মুখ ধীরে ধীরে অন্য রূপে পরিবর্তিত হতো।
একজন মানুষ থেকে নারী বা পঙ্ক থেকে বৃদ্ধ—এসব দৃশ্য তৈরি করা হতো, যা আগে কেউ দেখেনি।
ট্রেভর হর্ন জানান, ১৯৮০-এর দশকে এই ভিডিওটি ছিল অন্যতম আলোচিত একটি কাজ। ২০১৬ সালে তিনি একটি কনসার্টে ‘ক্রাই’ গানটি লাইভ পরিবেশন করেন।
তাঁর মতে, গানটি আজও দারুণ শোনায়।
গডলি অ্যান্ড ক্রেমের এই যুগান্তকারী কাজটি কেবল একটি গানের ভিডিও ছিল না, বরং তা ছিল প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল আর্টের এক নতুন দৃষ্টান্ত। তাঁদের এই সৃষ্টি সঙ্গীত এবং ভিডিওর জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা আজও শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান