ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের নামে আমেরিকাতে বাড়ছে প্রতারণা, বাড়ছে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ। সম্প্রতি সিএনএন-এর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কীভাবে প্রতারকেরা ক্রিপ্টো এটিএম-এর (ATM) মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক, কারণ ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারের সাথে সাথে এই ধরনের প্রতারণার ঝুঁকি বাড়ছে এবং এর থেকে বাঁচতে সচেতনতা জরুরি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতারকরা ভুক্তভোগীদের ফোন করে বিভিন্ন ভয় দেখায় এবং দ্রুত টাকা পরিশোধ করতে বলে। অনেক সময় ভুয়া জরিমানা বা দেনা পরিশোধের কথা বলে ক্রিপ্টোকারেন্সি এটিএম-এ টাকা জমা দিতে প্ররোচিত করে। একবার যদি কেউ এটিএম-এ টাকা জমা করে, তবে সেই টাকা দ্রুত আন্তর্জাতিক গন্তব্যে পাচার হয়ে যায়, যা পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়ে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, একটি নির্দিষ্ট ক্রিপ্টো এটিএম-এর সঙ্গে জড়িত অন্তত এক ডজনের বেশি প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। এর থেকে বোঝা যায়, এই ধরনের প্রতারণা কতটা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (FBI)-এর তথ্য অনুযায়ী, শুধু এই বছরের প্রথমার্ধে ক্রিপ্টোকারেন্সি এটিএম-এর মাধ্যমে হওয়া প্রতারণায় আমেরিকানরা প্রায় ২৪ কোটি ডলার হারিয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সমান।
প্রতারকরা প্রায়ই সাধারণ মানুষের প্রযুক্তিগত দুর্বলতার সুযোগ নেয়। তারা ভুক্তভোগীদের বুঝিয়ে দেয় যে ক্রিপ্টো এটিএম-এর মাধ্যমে টাকা দেওয়া একটি বৈধ প্রক্রিয়া। অনেক ক্ষেত্রে তারা ভুক্তভোগীদের এমন সব কথা বলে যা তাদের বিশ্বাস করতে প্ররোচিত করে। উদাহরণস্বরূপ, তারা সরকারি কর্মকর্তা সেজে অথবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রের পরিচয় দিয়ে ভুয়া তথ্যের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের প্রভাবিত করে।
এই ধরনের প্রতারণা বন্ধ করতে বিভিন্ন রাজ্যে আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। কিছু রাজ্যে ক্রিপ্টো এটিএম-এর মাধ্যমে দৈনিক লেনদেনের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে প্রতারণার মাধ্যমে বেশি পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব না হয়। তবে, ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসার সাথে জড়িত কোম্পানিগুলো এই ধরনের আইনের বিরোধিতা করছে এবং তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে চাইছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন দ্রুত হওয়ায় এবং এর আন্তর্জাতিক প্রকৃতির কারণে প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের টাকা ফেরত পাওয়া কঠিন। তাই, এই ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচতে হলে মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং কোনো অজানা ব্যক্তির ফোনকলে প্ররোচিত হয়ে কোনো প্রকার লেনদেন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া, ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে বুঝে তবেই এতে বিনিয়োগ করা উচিত।
তথ্যসূত্র: সিএনএন