ক্রিপ্টোকারেন্সি: অনলাইন থেকে বাস্তব জীবনে সহিংসতা, বাড়ছে অপরাধ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রিপ্টোকারেন্সির (Cryptocurrency) জনপ্রিয়তা দ্রুত বেড়েছে, এবং এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই সম্পর্কিত অপরাধের সংখ্যা।
শুধু ডিজিটাল জগৎ নয়, অপরাধীরা এখন বাস্তব জীবনেও নেমে আসছে, যেখানে তারা অপহরণ, শারীরিক নির্যাতন এবং সরাসরি হামলার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের তদন্ত সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূল কারণ হলো ক্রিপ্টোকারেন্সির বিশাল আর্থিক মূল্য, দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং অপরাধীদের শনাক্ত করতে না পারার সুযোগ।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) জানিয়েছে, ইন্টারনেট-সংক্রান্ত অপরাধ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। তাদের ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে প্রায় ৮ লক্ষ ৬০ হাজার অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার ফলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লক্ষ ৭৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এর মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি-সংক্রান্ত ক্ষতির পরিমাণ ৬৫০ কোটি ডলারেরও বেশি।
সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার দিকে নজর দেওয়া যাক। নিউইয়র্কের একটি ঘটনায়, জন ওয়েলটজ এবং উইলিয়াম ডুপ্লেসি নামের দুই মার্কিন ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা তাদের এক ইতালীয় সহযোগীকে কয়েক সপ্তাহ ধরে বন্দী করে তাঁর কাছ থেকে বিটকয়েনের পাসওয়ার্ড আদায়ের জন্য নির্যাতন করেছেন।
অন্যদিকে, ফ্রান্সে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসায়ীদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাও বাড়ছে। সম্প্রতি, এক ব্যবসায়ীর বাবাকে অপহরণ করে তাঁর ছেলের কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয় এবং মুক্তিপণের দাবিতে তাঁর একটি আঙুল কেটে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।
এছাড়াও, প্যারিসে একজন ব্যক্তিকে অপহরণ করে তাঁর কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা হয় এবং তাঁর আঙুল কেটে নেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারের দ্রুত বিস্তার এবং এর সঙ্গে জড়িত বিপুল পরিমাণ অর্থের কারণে অপরাধীরা আকৃষ্ট হচ্ছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের গোপনীয়তা এবং দুর্বল নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নিয়ে তারা সহজে অপরাধ করতে পারছে।
উদাহরণস্বরূপ, অপরাধীরা ভুক্তভোগীর বাড়ি থেকে তাদের ‘হার্ডওয়্যার ওয়ালেট’ চুরি করতে পারে, যেগুলির মাধ্যমে তাদের ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করা সম্ভব হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জন গ্রিফিন মনে করেন, “ক্রিপ্টোকারেন্সি কার্যকলাপের কারণে অপরাধীরা আরও বেশি সাহসী হয়ে উঠছে। আগে যেখানে ব্যাংক ডাকাতির মতো ঘটনাকে সমাজের চোখে খারাপ হিসেবে দেখা হতো, সেখানে এখন ক্রিপ্টোকারেন্সি-সংক্রান্ত অপরাধগুলো যেন এই খেলারই অংশ।”
বাংলাদেশেও ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। তাই, এই ধরনের ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। বিনিয়োগের আগে, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং এর সঙ্গে জড়িত ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।
কোনো ধরনের লোভনীয় প্রস্তাবের শিকার হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচানো এবং সন্দেহজনক কার্যকলাপ সম্পর্কে দ্রুত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানো উচিত।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস