সমুদ্রের বুকে সাদা ফেনা: কিউবার মৎস্যজীবীদের অভিনব কৌশল।
দূরে তাকালে মনে হয় যেন সমুদ্রের বুকে কয়েকটি সাদা বিন্দু ভেসে বেড়াচ্ছে। কাছে গেলে দেখা যায়, তারা আসলে মানুষ, পলিস্টাইরিন ফোমের তৈরি ভেলাতে বসে আছে।
কিউবার রাজধানী হাভানার উপকূলের জলে এই দৃশ্য এখন খুব স্বাভাবিক। মাছ ধরার জন্য ব্যবহৃত এই ভেলাগুলির নাম ‘কোরচো’।
নিয়মিত মাছ ধরার নৌকার অভাব অথবা তা সংগ্রহ করার কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য কিউবার মৎস্যজীবীরা এই অভিনব উপায় বের করেছেন।
এই ‘কোরচো’ বা ভেলাগুলো প্রায় ২ মিটার লম্বা এবং ১.৫ মিটার চওড়া। একজন মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় মাছ ধরার সরঞ্জাম, যেমন – বড়শি, রোল, প্লায়ার্স ও অন্যান্য জিনিস নিয়ে স্বচ্ছন্দে এই ভেলায় বসা সম্ভব।
নৌকা বা আধুনিক সরঞ্জামের অভাবে কিউবার মৎস্যজীবীরা তাদের জীবন ধারণের জন্য উদ্ভাবনী সব উপায় খুঁজে বের করেন। তাদের মাছ ধরার এই কৌশল সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
হাভানার কোজিমার উপকূলের কাছাকাছি প্রায়ই দেখা যায়, জেলেরা তাদের সারাদিনের মাছ শিকার শেষে এই ভেলাগুলির মাধ্যমেই তীরে ফিরছেন। কখনও তারা তাদের শিকার করা মাছ ডাঙায় তুলে আনেন, আবার কখনও তাদের পরিবারের সদস্যরা এসে সেই মাছ সংগ্রহ করেন।
এই ‘কোরচো’ তৈরি করা হয় মূলত হালকা ও সহজে বহনযোগ্য ফোম জাতীয় উপাদান দিয়ে। স্থানীয় ভাষায় এটিকে ‘কোরচো’ বলা হলেও, এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে আমরা ‘ভেলা’ ব্যবহার করতে পারি।
এই ভেলাগুলো তৈরি করা সহজ এবং প্রয়োজনীয় উপকরণও হাতের কাছে পাওয়া যায়। কিউবার মৎস্যজীবীদের এই উদ্ভাবনী ক্ষমতা তাদের জীবন ধারণের লড়াইয়ে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
মাছ ধরা শেষে অনেক জেলেকে দেখা যায় তাদের বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে। কেউ কেউ আবার তাদের মাছ বিক্রি করার জন্য হাভানার উপকূলে অপেক্ষা করেন।
এই ছবিগুলো যেন কিউবার মানুষের জীবন সংগ্রামের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
স্থানীয় জেলে মিগুয়েল গঞ্জালেজের ভাষায়, “এই ‘কোরচো’ আমাদের কাছে শুধু ভেলা নয়, এটি আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন।”
এমনকি গভীর সমুদ্রেও তারা এই ভেলা ব্যবহার করে মাছ ধরেন। একবার এক জেলে বিশাল আকারের হাতুড়ি মাছ ধরেছিলেন, যা সত্যিই তাদের এই উদ্ভাবনী কৌশলের সফলতা প্রমাণ করে।
ভোরবেলা যখন সূর্য ওঠে, তখনও অনেক জেলেকে এই ভেলা নিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায়।
কিউবার জেলেদের এই লড়াই, তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, প্রতিকূলতাকে জয় করার মানসিকতা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস