বিখ্যাত লেখিকা সিনথিয়া ওজিকের চোখে বইয়ের জগৎ: শৈশব থেকে বর্তমান
সিনথিয়া ওজিক, যিনি তাঁর ‘ইন এ ইয়েলো উড’ বইটির জন্য সুপরিচিত, সম্প্রতি তাঁর পছন্দের কিছু বই নিয়ে কথা বলেছেন। বইগুলো তাঁর জীবন ও লেখাকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। বইয়ের প্রতি তাঁর এই গভীর ভালোবাসার যাত্রা, পাঠকদের কাছে এক দারুণ অভিজ্ঞতা।
ছোটবেলার স্মৃতি: রূপকথার জগৎ
ছোটবেলায় সিনথিয়ার প্রথম পাঠের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে, তিনি অ্যান্ড্রু ল্যাং-এর রূপকথার বইগুলির কথা উল্লেখ করেন। নীল, হলুদ ও বেগুনী রঙের এই বইগুলো তাঁকে মুগ্ধ করত। একইসাথে, গ্রিম ভাইদের “অ্যাডভেঞ্চার” গল্পগুলোও তাঁর শৈশবের স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
যে বই বদলে দিল জীবন: ইতিহাসের গভীরতা
কৈশোরে, বিশেষ করে সতেরো বছর বয়সে, দুটি বই তাঁর জীবনকে নতুন পথে চালিত করে। প্রথমটি ছিল এডওয়ার্ড গিবনের লেখা ‘ডিক্লাইন অ্যান্ড ফল অফ দ্য রোমান এম্পায়ার’, যা উজ্জ্বল ভাষায় লেখা ছিল। দ্বিতীয়টি ছিল হাইনরিখ গ্রেটজের ‘হিস্টরি অফ দ্য জিউস’। যদিও বইটি পুরনো, তবুও এর গভীরতা ছিল অসাধারণ। এই দুটি বই তাঁকে অতীতের দীর্ঘ পথ এবং ইতিহাসের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা দেয়।
প্রিয় লেখক: দোস্তয়েভস্কি
সিনথিয়ার মতে, একসময় তিনি দস্তয়েভস্কিকে অপছন্দ করতেন। তাঁর অস্থির চরিত্র, গোঁড়ামি এবং ভাষার জটিলতা তাঁকে আকর্ষণ করত না। কিন্তু জোসেফ ফ্রাঙ্কের লেখা ‘দস্তয়েভস্কি: এ রাইটার ইন হিজ টাইম’ বইটি পড়ার পর তাঁর ধারণা বদলে যায়। তিনি বুঝতে পারেন, দস্তয়েভস্কির শিল্পকর্মের মাধ্যমেই শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব।
লেখিকা হওয়ার পথে: ‘ছোটো নারী’র প্রভাব
ছোটবেলা থেকেই সিনথিয়ার মনে লেখক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। তাঁর কাকা ছিলেন একজন হিব্রু কবি। তবে, ‘ছোটো নারী’ বইটি তাঁকে লেখার পদ্ধতি শিখিয়েছে। তিনি বলেন, এই বইটির চরিত্র জো-এর মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেতেন এবং লেখার ক্ষমতা সম্পর্কে নতুন ধারণা জন্মাত। তাঁর মতে, শব্দ শুধু আনন্দই দেয় না, বরং বাস্তবতাকে পরিবর্তন করতে পারে।
আলোচিত বই: ‘ললিতা’
নাভোকভের ‘ললিতা’ বইটি প্রথম পড়ার সময়, এর বিষয়বস্তু সিনথিয়াকে হতাশ করেছিল। তবে, আজার নাফিসির ‘রিডিং ললিতা ইন তেহরান’ বইটি পড়ার পর তিনি উপলব্ধি করেন, যারা প্রতিকূল পরিবেশে বাস করেন, তাঁদের কাছে বইটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
বারবার ফিরে আসা: ‘লংগেস্ট জার্নি’
ই.এম. ফরস্টারের ‘লংগেস্ট জার্নি’ বইটি সিনথিয়ার পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে। তিনি বহুবার এই বইটি পড়েছেন। বইটির চরিত্র চিত্রণ তাঁকে আজও মুগ্ধ করে।
যা আর পড়তে চান না: ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’
ছোটবেলায় ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ বইটি তাঁর কাছে রহস্যময় ও মজাদার ছিল। কিন্তু এখন, তাঁর মনে হয়, এটি নিষ্ঠুরতার একটি উদাহরণ। লুইস ক্যারলের এই গল্পে, তিনি একটি শীতল, বিমূর্ত নকশা খুঁজে পান।
পরবর্তীকালে আবিষ্কার: ‘ওয়ালডেন’
হেনরি ডেভিড थोरोর ‘ওয়ালডেন’ বইটি সিনথিয়ার কাছে নতুন আবিষ্কার। যদিও বইটি সবসময় ছিল, তিনি সম্প্রতি এটি পড়েছেন। এই বই আমেরিকান সাহিত্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখকের কাজ।
বর্তমানে পাঠ: ছোট গল্পের প্রতি আকর্ষণ
বর্তমানে সিনথিয়া ছোট গল্পের প্রতি আকৃষ্ট। তিনি হেনরি জেমস, অ্যাগনন, বোর্হেস, ল্যাম্পেদুসা, টলস্টয়, চেইম গ্রেড এবং আইজ্যাক বাবলের মতো লেখকদের গল্পগুলি পড়ছেন।
প্রিয় উপন্যাস: ‘পারসেশন’
প্রিয় বইয়ের তালিকায় জেন অস্টিনের ‘পারসেশন’ -এর নাম উল্লেখ করেন তিনি।
সিনথিয়ার নতুন বই ‘ইন এ ইয়েলো উড’ প্রকাশিত হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান