দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীর যোদ্ধা এবং টিকটক তারকা ‘পাপা জ্যাক’ লারসন, ১০২ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। ১৯৪৪ সালে নরমান্ডির সমুদ্র তীরে জার্মান সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকে ছিলেন তিনি।
পরবর্তীকালে, এই প্রবীণ ব্যক্তি টিকটকে তাঁর যুদ্ধের স্মৃতিচারণা করে ১৪ লক্ষাধিক অনুসারীর মন জয় করেছিলেন।
পাপা জ্যাক, যিনি ছিলেন আমেরিকার মিনেসোটা প্রদেশের বাসিন্দা। হাসি-খুশি এই মানুষটি তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ ও উষ্ণ আলিঙ্গনের জন্য সকলের কাছে পরিচিত ছিলেন।
তাঁর মৃত্যুর খবর জানিয়ে নাতনী ম্যাকায়েলা লারসন জানান, “পাপা শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।”
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পাওয়া এই বীর সেনানির প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন তাঁর অনুরাগী থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের মানুষ। ফ্রান্সের নরমান্ডির শহরগুলোতেও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
কারণ, মিত্রশক্তির এই বিজয়ে নাৎসিদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিল তারা।
১৯২২ সালের ২০ ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া জ্যাক লারসন ১৯৩৮ সালে ১৫ বছর বয়সে নিজের বয়স লুকিয়ে ন্যাশনাল গার্ডে যোগ দেন।
১৯৪২ সালে তাঁকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে পাঠানো হয় এবং তিনি নরম্যান্ডি অভিযানের পরিকল্পনা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৪৪ সালের ৬ জুন ডি-ডে’র দিনে প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার মিত্রবাহিনীর সঙ্গে তিনিও নরমান্ডির সমুদ্র তীরে নামেন।
ওমাহা সৈকতে জার্মান গোলন্দাজ বাহিনীর আক্রমণ থেকে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি।
যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে পাওয়া তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা তিনি সবসময় সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতেন।
যুদ্ধ শেষে তিনি ব্রোঞ্জ স্টার এবং ফরাসি লেজিওন অফ অনার খেতাব লাভ করেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ডি-ডে’র বার্ষিকী উপলক্ষে নরমান্ডিতে যেতেন।
সেখানে গেলে ভক্তরা তাঁকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিত। তাঁদের সঙ্গে ছবি তোলার আবদারও মেটাতেন তিনি।
পাপা জ্যাক সবসময় বলতেন, “আমরাই ভাগ্যবান।” তাঁর মতে, “যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি সম্মান জানানো আমাদের দায়িত্ব।”
২০২৩ সালে, তিনি বিল গ্লাডেন নামের এক ব্রিটিশ যুদ্ধ-ফেরত সৈনিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যিনি ডি-ডে’র সময় প্যারাসুটে করে অবতরণ করার সময় আহত হয়েছিলেন।
পাপা জ্যাক তাঁকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, “আমি তোমাকে আলিঙ্গন করতে চাই। তোমার জন্য আমার চোখে জল চলে এসেছে। আমাদের দেখা হওয়াটা যেন পূর্বনির্ধারিত ছিল।”
টিকটকের মাধ্যমে তিনি তাঁর জীবনের গল্পগুলো তুলে ধরতেন, যা আজও অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা।
যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি সবসময় শান্তির বার্তা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “যুদ্ধ নয়, শান্তি আনুন।”
তিনি প্রায়ই নিজেকে ‘পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান ব্যক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করতেন। তাঁর এই জনপ্রিয়তা দেখে তিনি বিস্মিত হতেন।
তিনি বলেছিলেন, “আমি তো একজন সাধারণ মানুষ। টিকটকে এখন আমি একজন তারকা!”
নরম্যান্ডির বিভিন্ন জাদুঘর ও ডি-ডে’র যোদ্ধাদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোও পাপা জ্যাকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে। ওভারলর্ড মিউজিয়াম তাদের ফেসবুক পোস্টে লিখেছে, “তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ সাক্ষী এবং স্মৃতির ধারক।”
পাপা জ্যাকের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করে তারা আরও জানায়, “প্রতি বছর তিনি হাসি মুখে আমাদের জাদুঘরে আসতেন, তাঁর গল্প শোনাতেন, যা সব প্রজন্মের মানুষকে ছুঁয়ে যেত।
তাঁর গল্পগুলো বেঁচে থাকবে। শান্তিতে থাকুন, পাপা জ্যাক। আপনার জন্য অনেক ধন্যবাদ।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস