দলাই লামার পর কে? বড় ঘোষণা!

তিব্বতের আধ্যাত্মিক গুরু, দালাই লামা, তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচনের ঘোষণা করেছেন। এই ঘোষণার পরেই বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে, কারণ তাঁর এই সিদ্ধান্ত শুধু তিব্বতের মানুষের ভবিষ্যৎ নয়, বরং চীন-তিব্বত সম্পর্কের জটিলতাকেও নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে।

খবর অনুযায়ী, আসন্ন ৯০তম জন্মবার্ষিকীর প্রাক্কালে দালাই লামা জানিয়েছেন, তাঁর মৃত্যুর পর নতুন দালাই লামা নির্বাচন করা হবে এবং এই প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেবে তাঁর কার্যালয়।

দালাই লামা, যিনি বহু বছর ধরে তিব্বতি বৌদ্ধদের কাছে ঈশ্বরের আসনে পূজিত হয়ে আসছেন, নিজেকে একজন সাধারণ সন্ন্যাসী হিসেবে পরিচয় দেন। কিন্তু তাঁর অনুসারীরা তাঁকে করুণার দেবতা হিসেবেও বিবেচনা করেন।

তিব্বতের স্বাধীনতা এবং স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনেও তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। তাঁর এই ঘোষণা, তিব্বতের মানুষের আত্মপরিচয়ের লড়াইকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, চীনের জন্য এই ঘোষণা উদ্বেগের কারণ। বেইজিং দীর্ঘদিন ধরেই তিব্বতের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে এবং তারা মনে করে, পরবর্তী ধর্মীয় নেতার অনুমোদন তাদের হাতেই থাকা উচিত।

চীন মনে করে, দালাই লামা তিব্বতকে চীন থেকে আলাদা করার চেষ্টা করছেন। অতীতে চীনের নেতারা তাঁকে ‘সন্ন্যাসীর বেশে নেকড়ে’ বলেও অভিহিত করেছেন।

বর্তমানে নির্বাসিত জীবন যাপন করা দালাই লামা বহু বছর ধরে তিব্বতের স্বায়ত্তশাসনের জন্য শান্তিপূর্ণ আলোচনার কথা বলেছেন। তিনি চান, তিব্বতের মানুষ যেন তাদের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচতে পারে।

ঐতিহ্যগতভাবে, দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল। সাধারণত, প্রবীণ সন্ন্যাসীরা আধ্যাত্মিক লক্ষণ ও দর্শনের ভিত্তিতে পরবর্তী দালাই লামাকে চিহ্নিত করেন।

তবে দালাই লামা নিজেই জানিয়েছেন, তিনি তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচনের জন্য লিখিত নির্দেশনা রেখে যেতে পারেন। এমনকী, তিনি জীবিত থাকাকালীন সময়েও উত্তরসূরি নির্বাচন করতে পারেন।

এই পরিস্থিতিতে, অনেকেই মনে করছেন, ভবিষ্যতে হয়তো একাধিক দালাই লামা দেখা যেতে পারে – একজন চীনের সমর্থনপুষ্ট, অন্যজন বর্তমান দালাই লামার অনুগত সন্ন্যাসীদের দ্বারা নির্বাচিত।

চীন ইতোমধ্যেই অন্য ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের, বিশেষ করে পঞ্চেন লামার মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের উত্থাপন করতে চেয়েছে।

দালাই লামার এই ঘোষণা শুধু তিব্বতের মানুষের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং বিশ্বজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রেও এর গভীর প্রভাব রয়েছে।

তাঁর এই সিদ্ধান্তের ফলে তিব্বতের ভবিষ্যৎ এবং চীন-তিব্বত সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *