বিখ্যাত টিভি সিরিয়াল ‘হোয়াটস হ্যাপেনিং!’-এর তারকা ড্যানিয়েল স্পেন্সার, যিনি ডী থমাস চরিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি পেয়েছিলেন, ৬০ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সোমবার (তারিখ এখনও নিশ্চিত করা যায়নি) ভার্জিনিয়ার একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি, পশুচিকিৎসক হিসেবেও তিনি পরিচিত ছিলেন এবং পশুদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন।
ড্যানিয়েল স্পেন্সার ১৯৭০-এর দশকে জনপ্রিয় হওয়া ‘হোয়াটস হ্যাপেনিং!’ সিটকমে (situation comedy) ডী থমাস চরিত্রে অভিনয় করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সিরিয়ালে তার বুদ্ধিদীপ্ত অভিনয়, বিশেষ করে দাদা রোজার ‘রাজ’ থমাস এবং তার বন্ধু ডুয়েন নেলসন ও ফ্রেডি ‘রীরান’ স্টাবসের প্রতি তার ঠাট্টা-বিদ্রূপ দর্শকদের কাছে বেশ উপভোগ্য ছিল। ডীর একটি বিখ্যাত উক্তি ছিল, “ওহ, আমি মাকে গিয়ে বলব!”।
‘হোয়াটস হ্যাপেনিং!’ ছিল মূলত লস অ্যাঞ্জেলেসের ওয়াটস এলাকার কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর-কিশোরীদের জীবন নিয়ে তৈরি একটি ধারাবাহিক। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত এটি এবিসি চ্যানেলে প্রচারিত হয়। এই সিরিয়ালটি সেই সময়ে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা টেলিভিশনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
অভিনয়ের পাশাপাশি ড্যানিয়েল স্পেন্সারের জীবন ছিল বহু বর্ণময়। শৈশবে তিনি নিউ জার্সিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং নিউ ইয়র্কে বেড়ে ওঠেন। অভিনয়ের শুরুটা হয় অল্প বয়সেই, যখন তার বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর। ‘হোয়াটস হ্যাপেনিং!’ ছিল তার প্রথম উল্লেখযোগ্য কাজ।
১৯৭৭ সালে, ক্যালিফোর্নিয়ার মালিবু-র প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়েতে এক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন। এই দুর্ঘটনায় তিনি দীর্ঘদিন কোমায় ছিলেন এবং তার শরীরে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল। এই ঘটনার কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগেছেন।
পরবর্তীতে, তিনি ভেটেরিনারি মেডিসিনে (পশুচিকিৎসা বিজ্ঞান) পড়াশোনা করেন এবং পশুচিকিৎসক হন। পশুদের প্রতি তার গভীর ভালোবাসাই তাকে এই পেশা বেছে নিতে উৎসাহিত করেছে। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, ডেভিস এবং ইউসিএলএ-তে পড়াশোনা করেন। এরপর ১৯৯৩ সালে টাসকেগি ইউনিভার্সিটি থেকে ভেটেরিনারি মেডিসিনে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
অভিনয় থেকে পশুচিকিৎসা—ড্যানিয়েল স্পেন্সারের এই যাত্রাপথ ছিল দৃষ্টান্তমূলক। তিনি প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে যেকোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব।
ড্যানিয়েল স্পেন্সার ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ‘হোয়াটস হ্যাপেনিং নাও!’-এর কয়েকটি পর্বে অভিনয় করেছিলেন। এছাড়া ১৯৯৭ সালের ‘অ্যাজ গুড অ্যাজ ইট গেটস’ ছবিতেও তাকে দেখা যায়।
ড্যানিয়েল স্পেন্সারের পরিবারে রয়েছেন তার ভাই, সঙ্গীতশিল্পী জেরেমি পেল্ট এবং মা চেরিল পেল্ট। তার প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস