নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে ১৯৯৭ সালে সংঘটিত একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আজও সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৫ বছর বয়সী দুই কিশোর-কিশোরী, ড্যাফনে আবদেলা এবং ক্রিস্টোফার ভাসকুয়েজ মিলে খুন করেছিল ৪৪ বছর বয়সী মাইকেল ম্যাকমোরোকে।
এই ঘটনার প্রায় ২৮ বছর পর, অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, এখন কোথায় তারা?
ঘটনার সূত্রপাত হয় ১৯৯৭ সালের মে মাসে। ড্যাফনে ছিল নিউ ইয়র্কের আপার ওয়েস্ট সাইডের এক ধনী পরিবারের সন্তান।
অন্যদিকে, ক্রিস্টোফার ছিল ইস্ট হারলেমের এক সাধারণ পরিবারের ছেলে। তারা দুজনেই ছিল সমাজের চোখে কিছুটা আলাদা, এবং সম্ভবত এই কারণেই তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছিল এক অদ্ভুত সম্পর্ক।
ঘটনার দিন, সেন্ট্রাল পার্কে বন্ধুদের সঙ্গে মদ্যপান করছিলেন মাইকেল ম্যাকমোরো। ড্যাফনে ও ক্রিস্টোফারও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। এরপর গভীর রাতে, ঝগড়ার জেরে ম্যাকমোরোকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়।
এরপর তারা প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে তার মৃতদেহ লেকের পানিতে ফেলে দেয়।
পরের দিন সকালে, পুলিশ ড্যাফনের অ্যাপার্টমেন্টে যায়, যেখানে তারা দুজনকে বাথরুমে একসঙ্গে গোসল করতে দেখে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার কথা অস্বীকার করে, কিন্তু পরে পুলিশের জেরার মুখে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে।
তদন্তে জানা যায়, ম্যাকমোরোকে ৩০ বারের বেশি ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ড্যাফনে এবং ক্রিস্টোফারকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা শুরু হয়। বিচারের সময়, ড্যাফনে তার দোষ স্বীকার করে নেয় এবং তার বিরুদ্ধে প্রথম-ডিগ্রি নরহত্যার অভিযোগ আনা হয়।
তাকে ৩৯ মাস থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অন্যদিকে, ক্রিস্টোফারের বিচার চলে এবং বিচারে তাকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাকেও একই ধরনের সাজা দেওয়া হয়।
কারামুক্তির পর, ড্যাফনে আবদেলাকে একবার সেন্ট্রাল পার্কে দেখা গিয়েছিল, যেখানে সে নিহত ম্যাকমোরোর উদ্দেশ্যে একটি দুঃখ প্রকাশ করে চিঠি এবং ফুল রেখে আসে। যদিও প্যারোলের শর্ত ভঙ্গের কারণে তাকে পুনরায় কারাগারে যেতে হয়।
বর্তমানে, ড্যাফনে এবং ক্রিস্টোফার দুজনেই নিউ ইয়র্ক শহরে সাধারণ জীবনযাপন করছেন এবং তারা প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকতে চান।
এই ঘটনাটি কিশোর অপরাধ এবং তার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। ড্যাফনে এবং ক্রিস্টোফারের জীবন, তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ আজও যেন এক গভীর ক্ষত বহন করে চলেছে।
তথ্য সূত্র: পিপলস