ডার্ক এনার্জি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য! বিজ্ঞানীরা কি ভুল ছিলেন?

মহাবিশ্বের এক বিরাট রহস্য: ‘ডার্ক এনার্জি’ কি তবে দুর্বল হয়ে পড়ছে?

মহাকাশ বিজ্ঞানীদের নতুন এক গবেষণা মহাবিশ্বের এক গভীর রহস্যের জট খোলার ইঙ্গিত দিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, ‘ডার্ক এনার্জি’ (Dark Energy) নামক এক অদৃশ্য শক্তি মহাবিশ্বের প্রসারণের জন্য দায়ী এবং এটি একটি ধ্রুবক হিসেবে কাজ করে।

কিন্তু নতুন পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, এই ‘ডার্ক এনার্জি’ হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়ছে। যদি এমনটা সত্যি হয়, তবে মহাবিশ্বের ধারণা সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের প্রচলিত ধারণাগুলো নতুন করে সাজাতে হবে।

ডার্ক এনার্জি হলো এমন এক শক্তি যা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে ত্বরান্বিত করে। বিজ্ঞানীরা এখনো জানেন না এই শক্তির স্বরূপ আসলে কি, তবে তাঁরা ধারণা করেন, এটি মহাবিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ স্থান জুড়ে রয়েছে।

এই রহস্য উন্মোচনের উদ্দেশ্যে ‘ডার্ক এনার্জি স্পেক্ট্রোস্কোপিক ইনস্ট্রুমেন্ট’ বা সংক্ষেপে ‘DESI’ (Dark Energy Spectroscopic Instrument) নামক একটি অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি অ্যারিজোনার একটি মানমন্দিরে স্থাপন করা হয়েছে।

এই যন্ত্রের মাধ্যমে একসঙ্গে ৫,০০০ গ্যালাক্সির আলো পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।

গত ১৯শে মার্চ প্রকাশিত ডেটা অনুযায়ী, DESI-এর প্রথম তিন বছরের পর্যবেক্ষণে প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ গ্যালাক্সি এবং কোয়াসারের (Quasars) আলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই বিশ্লেষণের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যার অধ্যাপক মুস্তাফা ইশাক-বৌশাকি।

তাঁর নেতৃত্বাধীন গবেষক দল দেখেছেন যে ‘ডার্ক এনার্জি’ অপ্রত্যাশিতভাবে আচরণ করছে এবং সময়ের সাথে সাথে এর প্রভাব কমতে পারে। যদি এমনটা সত্যি হয়, তবে ভবিষ্যতে মহাবিশ্বের প্রসারণ হয়তো কমে আসবে বা এমনকি বন্ধও হয়ে যেতে পারে।

ডার্ক এনার্জির আবিষ্কার ছিল আমার বিজ্ঞানী জীবনের সবচেয়ে বড় চমক। নতুন এই পর্যবেক্ষণগুলো প্রমাণ করে যে ডার্ক এনার্জি পরিবর্তনশীল, যা আমাদের মহাবিশ্বের ধারণা সম্পূর্ণ বদলে দেবে।”

ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডেভিড উইনবার্গ, যিনি DESI বিশ্লেষণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন

বিজ্ঞানীরা ‘ব্যারিয়ন অ্যাকোস্টিক অসিলেশন’ (Baryon Acoustic Oscillation – BAO) নামে পরিচিত একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে মহাবিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে দূরত্ব পরিমাপ করেন। এই পদ্ধতিতে তাঁরা মহাকাশে প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ ব্যবধানে অবস্থিত বস্তুর বিন্যাস পর্যবেক্ষণ করেন।

এর মাধ্যমে তাঁরা মহাবিশ্বের প্রসারণের হার নির্ণয় করেন।

DESI-এর তথ্য অন্যান্য পর্যবেক্ষণ, যেমন—নক্ষত্রের আলো এবং কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ডের (Cosmic Microwave Background) সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডার্ক এনার্জির প্রভাব হ্রাস পেতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, যদিও এখনো পর্যন্ত ডার্ক এনার্জির দুর্বল হওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে DESI-এর আরো উন্নত বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে।

সেই সাথে ‘স্পেক-এস৫’ (Spec-S5) এবং ‘ইউক্লিড’ (Euclid), ‘ন্যান্সি গ্রেস রোমান স্পেস টেলিস্কোপ’-এর মতো নতুন প্রকল্পের মাধ্যমেও এই বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

ডার্ক এনার্জির স্বরূপ উন্মোচন হলে, তা শুধু বিজ্ঞানীদের কৌতূহলই মেটাবে না, বরং মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, সে সম্পর্কেও ধারণা দেবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *