রাজনৈতিক ফান্ডের গোপন খেলা: গণতন্ত্রের পথে এক নতুন বিপদ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অঙ্গনে গোপন অর্থের ব্যবহার কীভাবে দেশটির সুপ্রিম কোর্টকে প্রভাবিত করেছে, গণতন্ত্রকে দুর্বল করেছে এবং মুষ্টিমেয় কিছু ধনী ব্যক্তির ক্ষমতা বাড়িয়েছে, তা নিয়ে অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র বানিয়েছেন পরিচালক অ্যালেক্স গিবনি।
‘দ্য ডার্ক মানি গেম’ নামের এই তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে, কীভাবে এই ‘ডার্ক মানি’ বা ‘অস্বচ্ছ রাজনৈতিক তহবিল’-এর বিস্তার ঘটছে এবং এর ভয়াবহতা বাড়ছে।
গিবনির তথ্যচিত্রের মূল বিষয় হলো, ২০১০ সালের ‘সিটিজেনস ইউনাইটেড’ মামলার রায়, যা কর্পোরেশন ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে নির্বাচনে অসীম পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার অনুমতি দেয়।
এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে ‘পে-টু-প্লে’ ব্যবস্থা, যেখানে অর্থই ক্ষমতার মূল চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথ্যচিত্রে ওহাইও রাজ্যের ঘুষ কেলেঙ্কারি এবং ফেডারেলিস্ট সোসাইটির মাধ্যমে রক্ষণশীল বিচারক নিয়োগের বিষয়গুলোও তুলে ধরা হয়েছে।
তথ্যচিত্রের ভাষ্যমতে, এই ধরনের আর্থিক কারসাজি ও আইনি ফাঁকফোকরগুলো কীভাবে মার্কিন গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল করে দিয়েছে, তা উদ্বেগের বিষয়।
এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো রাজনীতিবিদ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বৈরাচারী শাসকদের ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হয়েছে। গিবনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা এখন কর্তৃত্ববাদের দিকে ঝুঁকছি। এটি মূলত এক ধরনের ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’, যা ট্রাম্প, রাশিয়ার পুতিন, হাঙ্গেরির ভিক্টর অর্বান এবং ভারতের নরেন্দ্র মোদির মতো নেতাদের একত্রিত করে।”
গিবনির মতে, সরকার এখন কিছু ধনী ব্যক্তির পারস্পরিক সুবিধার বিনিময়ে পরিচালিত হচ্ছে। যখন কেউ সংবিধানের পরিবর্তে শুধুমাত্র ক্ষমতাবানদের প্রতি অনুগত থাকে, তখন বিচার বিভাগ প্রতিশোধের হাতিয়ার হয়ে ওঠে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দুর্বল হতে শুরু করে।
তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে, কীভাবে কর্পোরেট স্বার্থ ও রক্ষণশীল গোষ্ঠীর মধ্যে একটি জোট গঠিত হয়েছিল। তারা মূলত গর্ভপাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে পুঁজি করে সুপ্রিম কোর্টে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে।
প্রাক্তন ধর্মযাজক রবার্ট শ্যাঙ্ক এই জোটের বিষয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি জানান, কীভাবে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার প্রসারের জন্য এবং রক্ষণশীলরা তাদের আদর্শ রক্ষার জন্য একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল।
শ্যাঙ্ক ‘অপারেশন হায়ার কোর্ট’-এর কথা উল্লেখ করেন, যেখানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল সামাজিক অনুষ্ঠানে সম্পর্ক তৈরি করা, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যবহার করা এবং তাদের ব্যক্তিগত ও আদর্শগত চাহিদা পূরণ করা।
গিবনির তথ্যচিত্রের মাধ্যমে জানা যায়, কিভাবে ‘ডার্ক মানি’র বিস্তার গণতন্ত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ। একইসঙ্গে, এটি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে, সেই বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে রাজনৈতিক ফান্ডের অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান