জিন সম্পাদনার উদ্ভাবক: ৩ মিলিয়ন ডলার জিতে তাক লাগালেন!

শিরোনাম: জীবন বাঁচানো আবিষ্কার: জিন সম্পাদনার মাধ্যমে ব্রিটিশ কিশোরীর জীবন বাঁচানো, ৩ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার জিতলেন বিজ্ঞানী।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জগতে এক যুগান্তকারী সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ, ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইডে বেড়ে ওঠা খ্যাতনামা জীববিজ্ঞানী ডেভিড লিউ-কে সম্মানিত করা হয়েছে। সম্প্রতি, তিনি পেয়েছেন মর্যাদাপূর্ণ ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ‘ব্রেকথ্রু প্রাইজ’। এই পুরস্কারটি তাকে এনে দিয়েছে তার উদ্ভাবনী জিন সম্পাদনা পদ্ধতির জন্য, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

এই পদ্ধতির সাহায্যেই যুক্তরাজ্যের এক কিশোরীর জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে, যিনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন।

ডেভিড লিউ, ম্যাসাচুসেটসের ব্রড ইনস্টিটিউট অফ এমআইটি এবং হার্ভার্ডের একজন অধ্যাপক, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন জটিল রোগ নিরাময়ের লক্ষ্যে। তার তৈরি করা ‘বেস এডিটিং’ এবং ‘প্রাইম এডিটিং’ নামক অত্যাধুনিক জিন সম্পাদনা কৌশল দুটি চিকিৎসা বিজ্ঞানে এনেছে নতুন সম্ভাবনা। এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা ডিএনএ-র গঠন পরিবর্তন করতে পারেন, যা ত্রুটিপূর্ণ জিনের কারণে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করে।

২০২২ সালে, লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালে ১৩ বছর বয়সী অ্যালিসা ট্যাপলি নামের এক কিশোরীর জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছিল। অ্যালিসা, যিনি লিউকেমিয়ায় (রক্তের ক্যান্সার) ভুগছিলেন, প্রচলিত চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন না।

এরপর চিকিৎসকেরা ডেভিড লিউ-এর উদ্ভাবিত ‘বেস এডিটিং’ প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। এই পদ্ধতিতে, রোগীর শরীরের বাইরে টি-কোষগুলোকে (রোগ প্রতিরোধকারী কোষ) জিনগতভাবে পরিবর্তন করা হয় এবং পরে সেগুলো অ্যালিসার শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই চিকিৎসা সফল হওয়ার ফলে, অ্যালিসা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ জীবন যাপন করছেন।

এই সাফল্যের ফলে বিশ্বজুড়ে জিন সম্পাদনা প্রযুক্তির গুরুত্ব বেড়েছে। বর্তমানে, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও অনেক রোগের চিকিৎসার চেষ্টা চলছে, যার মধ্যে রয়েছে সিকেল সেল ডিজিজ, বিটা-থ্যালাসেমিয়া এবং উচ্চ কোলেস্টেরল।

বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও জটিল রোগ নিরাময় করা সম্ভব হবে।

তবে, এই প্রযুক্তির সফলতার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যেমন, এই চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো বেশ ব্যয়বহুল এবং সব ধরনের রোগের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা সম্ভব নয়।

তাছাড়া, জিন সম্পাদনা প্রযুক্তির নৈতিক দিক নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির খরচ কমানো এবং এর ব্যবহার আরও সহজ করার জন্য গবেষণা প্রয়োজন।

ডেভিড লিউ-এর এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার শুধু চিকিৎসা বিজ্ঞানকেই সমৃদ্ধ করেনি, বরং বিজ্ঞান গবেষণায় আগ্রহীদের জন্য এক নতুন অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তার এই পুরস্কার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে, জিনগত রোগের চিকিৎসায় এই ধরনের গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে, এই প্রযুক্তি আমাদের দেশের রোগীদের জন্য আরও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *