আতঙ্ক! ডি.সি.-তে আই.সি.ই. আতঙ্কে ডেলিভারি চালকদের পলায়ন?

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অভিবাসন কর্মকর্তাদের ধরপাকড়ের ভয়ে ভীত হয়ে সেখানকার অভিবাসী ডেলিভারি চালকরা হয় কৌশল পরিবর্তন করছেন, না হয় শহর ছেড়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির কড়াকড়ির কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানা গেছে।

ডেলিভারি চালকদের মধ্যে ভেনেজুয়েলার অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। তারা জানান, এখন আর আগের মতো নিরাপদে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে অর্ডারের জন্য অপেক্ষা করা যায় না। অনেকেই এখন মোটর সাইকেলের বদলে বাইসাইকেল ব্যবহার করছেন, যাতে পুলিশের নজরে না পড়েন।

অনেকে আবার শহর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছেন। এর ফলে স্থানীয় ব্যবসাগুলো ডেলিভারি দিতে দেরি হওয়া, গ্রাহক কমে যাওয়া এবং বিক্রি কমে যাওয়াসহ নানা সমস্যায় পড়ছে।

ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাস করা ইয়াকসন নামের এক ডেলিভারি চালক সিএনএনকে জানান, তিনি যখন একটি ডেলিভারি নেওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন, তখন কাছাকাছি একটি সাদা রঙের ট্রাক দেখে সন্দেহ হয়। ট্রাকের জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখেন, সেখানে কোনো অভিবাসন কর্মকর্তা আছেন কিনা।

পরিস্থিতি নিরাপদ মনে হওয়ার পরেই তিনি দ্রুত রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকে ডেলিভারিটি সংগ্রহ করেন। ইয়াকসন বলেন, “মানুষজন খুব ভীত।

আরেকজন চালক, যিনি তার নাম প্রকাশ করতে চাননি, জানান, তিনি ভেনেজুয়েলা থেকে এসেছেন এবং তার স্ত্রী ও দুটি সন্তান রয়েছে। তিনি বলেন, “এখানে বিল পরিশোধ করতে হয়, তাই ডেলিভারির কাজ করে সংসার চালাই।

তিনি আরও জানান, এখন কাজ করা আগের চেয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে।

আবেদন করা সত্ত্বেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন নারী ডেলিভারি চালক জানান, তিনিও তার ছোট মেয়েকে নিয়ে দুই বছর আগে ভেনেজুয়েলা থেকে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, “আমি খুব দুঃখিত, ভীত এবং হতাশ।

এখন আর ওয়াশিংটন ডিসিতে যাই না। ডেলিভারি চালক নারীদের কেউই এখন সেখানে যান না। আমাদের সবারই ছোট ছোট সন্তান রয়েছে।

ডেলিভারি অ্যাপগুলোতে কাজ করার জন্য সাধারণত সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো কাগজপত্র লাগে। তবে কিছু অ্যাপ সরকারি আইডি দিয়েও কাজ করার সুযোগ দেয়, যা অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য সহজলভ্য।

ওয়াশিংটন ডিসির মাউন্ট প্লিজেন্ট এলাকার একটি রেস্টুরেন্টের মালিক দিনেশ ট্যান্ডন জানান, ডেলিভারি কমে যাওয়ার কারণে তাদের ব্যবসা প্রায় ৩০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, “আগে দ্রুত অর্ডার পাওয়া যেত, কিন্তু এখন চালকদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

অনেক সময় তারা আসেই না।” একই এলাকার আরেক রেস্টুরেন্ট মালিক জানিয়েছেন, ডেলিভারি চালকের অভাবে তাদের লাভ প্রায় ৬০ শতাংশ কমে গেছে।

ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কর্মকর্তাদের ধরপাকড়ের কারণে সেখানকার স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একটি সুপারমার্কেটের কর্মী জানিয়েছেন, তার কাজের সময় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তার কয়েকজন সহকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মাউন্ট প্লিজেন্টের একজন ব্যবসায়ী হেক্টর, যিনি “এল ডমিনিকানো” নামে পরিচিত, জানান, তার কফি শপের বিক্রি কমে গেছে। তিনি বলেন, “আইসিই আসার পর থেকে মানুষজন ভীত হয়ে পড়েছে, শুধু ল্যাটিনো নয়, আমেরিকানরাও।

এই পরিস্থিতিতে অনেক ডেলিভারি চালক হয়তো শহর ছেড়ে যাচ্ছেন, অথবা তাদের জীবনযাত্রার ধরন বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের একটাই আর্তি – “আমাদের কাজ করতে দিন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *