একটি স্কটিশ ব্যান্ডের গান, যা শ্রমিকশ্রেণীর মানুষের প্রতি উৎসর্গীকৃত, কিভাবে বিশ্বজুড়ে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিল? ডিকন ব্লু (Deacon Blue) ব্যান্ডের ‘ডিগনিটি’ (Dignity) গানটির জন্মকথা শুনলে হয়তো অনেকের মনেই এমন প্রশ্ন জাগতে পারে।
আশির দশকে, যখন স্কটল্যান্ডে কাজ হারানো মানুষের সংখ্যা বাড়ছিল, সেই সময় এই গানটি লিখেছিলেন ব্যান্ডের প্রধান শিল্পী রিকি রস (Ricky Ross)।
গল্পটা শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালে, গ্রিসের ক্রিট দ্বীপে ছুটি কাটানোর সময়। রিকি সেখানকার একটি বিমানবন্দরে ‘সাউন্ডস’ (Sounds) ম্যাগাজিন কিনেছিলেন।
সেই ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ছিলেন জনপ্রিয় শিল্পী মরিসি (Morrissey), আর তার একটি লেখার শিরোনাম ছিল, ‘বিদেশ থেকে ঘরের ভাবনা’। এই কথাগুলো রিকির মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
তিনি তখন গ্লাসগোর একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। সেখান থেকে তিনি প্রায়ই সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের রাস্তা ঝাড়ু দিতে দেখতেন।
তাদের জীবনযাত্রা, কষ্ট, আর সমাজের প্রতি তাদের অবদান – এই সবকিছুই রিকির মনে গভীর রেখাপাত করে। তিনি ঠিক করলেন, এমন একটি গান লিখবেন, যা শ্রমজীবী মানুষের প্রতি উৎসর্গীকৃত হবে।
গানটির প্রথম কয়েকটি লাইন ছিল, “কাজের লোক, বিশ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে, একটা ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে ‘ডিগনিটি’ নামের জাহাজে চড়ে পালানোর স্বপ্ন দেখে।” রিকি চেয়েছিলেন, গানটি যেন সমাজের চোখে পিছিয়ে পড়া মানুষের স্বপ্ন আর তাদের আত্মমর্যাদার কথা বলে।
গানের কথাগুলোতে সেই সময়ের সমাজের প্রতিচ্ছবি ছিল, যেখানে বেকারত্ব ছিল একটি সাধারণ সমস্যা।
গানটি তৈরি হওয়ার পেছনে ছিল আরও কিছু মজার ঘটনা। ব্যান্ডের অন্য সদস্যরাও তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছিলেন।
ব্যান্ডের নারী কণ্ঠশিল্পী লরেন ম্যাকিনটোশ (Lorraine McIntosh) জানান, গানটি প্রথম শোনার সময় তিনি এর গভীরতা সেভাবে বুঝতে পারেননি।
তবে কনসার্টে আসা শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া দেখে তিনি ধীরে ধীরে এর মর্ম উপলব্ধি করেন। এমনকি, তিনি একবার একটি শব্দ ভুল বুঝে টানা ৩০ বছর ধরে ভুলভাবে গানটি গেয়ে গেছেন!
‘ডিগনিটি’ গানটি প্রথমে তেমন পরিচিতি পায়নি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি মানুষের মনে গভীর স্থান করে নেয়।
গানটি এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বিশেষ করে বিবাহ এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে বাজানো হয়। গানটি যেন শ্রমিকশ্রেণীর মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
এই গানের জন্মকথা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, গান শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং এটি সমাজের প্রতিচ্ছবি এবং মানুষের অনুভূতির গভীর প্রকাশ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান