যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে মুসলিম ও আরব কর্মীদের প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে, যা দেশটির বহু পরিচিত ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি’ (Diversity, Equity, and Inclusion – DEI) নীতির প্রতিচ্ছবি। সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে থেকেই এই ধরনের বৈষম্য শুরু হয়েছিল, এমনটাই উঠে এসেছে বিভিন্ন প্রতিবেদনে।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতকে কেন্দ্র করে মুসলিম ও আরব কর্মীদের কণ্ঠরোধ করার প্রবণতা বেড়েছে, যা উদ্বেগের কারণ।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, অনেক মার্কিন কোম্পানি প্রকাশ্যে তাদের DEI কর্মসূচি বাতিল করার ঘোষণা দিলেও, বাস্তবে মুসলিম ও আরব কর্মীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ অব্যাহত রেখেছে। কর্মীদের মধ্যে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানানোয় অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, কর্তৃপক্ষের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়া হয়েছে।
আমেরিকান-ইসলামিক সম্পর্ক বিষয়ক কাউন্সিল (Council on American-Islamic Relations – CAIR) জানিয়েছে, তারা ২০২৪ সালে কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের ১,৩২৯টি অভিযোগ পেয়েছে। এর আগের বছর, ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫৬৩।
এছাড়া, ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে, যখন গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ চলছিল, তখন তারা ৬৬২টি অভিযোগ নথিভুক্ত করে। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট হয় যে, মুসলিম কর্মীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক আচরণ বাড়ছে।
বৈষম্যের শিকার হওয়া কর্মীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- হেসেন জাবর। তিনি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ল্যাঙ্গোন হেলথ থেকে একটি পুরস্কার পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ফিলিস্তিনি নারীদের উপর গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রভাব নিয়ে কথা বলার কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
এছাড়াও, মাইক্রোসফটে কর্মরত আবদো মোহাম্মদ এবং হোসাম নাসর নামের দুই কর্মীকে ফিলিস্তিনিদের জন্য শোকসভা আয়োজনের কারণে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। গুগলের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোতেও আরব ও মুসলিম কর্মীদের ফিলিস্তিনের সমর্থনে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের বৈষম্য কেবল মুসলিম ও আরব সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ভিন্ন মতাদর্শের মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হচ্ছে, যা সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
কর্মীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি না করে, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা