সাধারণ ঠান্ডা লাগা বা অ্যালার্জির চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ঘুমের সমস্যা, সাধারণ সর্দি-কাশি বা অ্যালার্জির জন্য আমরা হরহামেশাই যে ওষুধগুলো ব্যবহার করি, তা ভবিষ্যতে স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সম্প্রতি এক গবেষণায় এই বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।
ডাক্তারদের মতে, সাধারণভাবে ব্যবহৃত এই ওষুধগুলোর মূল উপাদান হলো ‘ডাইফেনহাইড্রামিন’ (Diphenhydramine)। এটি এক ধরনের অ্যান্টিহিস্টামিন, যা অ্যালার্জির উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, এটি ঘুমের সমস্যা, উদ্বেগমুক্ত হওয়া, এমনকি সাধারণ ঠান্ডার উপশমেও ব্যবহৃত হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে এই ওষুধ সেবনের কিছু বিপদ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডাইফেনহাইড্রামিন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। এর ফলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া, মনোযোগের অভাব, এবং ঘুমের গুণগত মান কমে যেতে পারে।
এমনকি, দীর্ঘদিন ধরে এই ওষুধ সেবন করলে স্মৃতিভ্রংশতা বা ডিমেনশিয়া (dementia)-এর মতো স্নায়ুরোগের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, ডাইফেনহাইড্রামিন মস্তিষ্কের ‘এসিটাইলকোলিন’ নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিকের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। এসিটাইলকোলিন স্মৃতি, মনোযোগ এবং পেশী সঞ্চালনে সহায়তা করে।
তাই এই ওষুধের প্রভাবে স্মৃতি দুর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। এছাড়া, এই ওষুধ সেবনে ঘুম ঘুম ভাব, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং প্রস্রাবের সমস্যা হতে পারে।
কিছু ক্ষেত্রে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া বা বিভ্রান্তিও দেখা দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (FDA) জানিয়েছে, অতিরিক্ত মাত্রায় ডাইফেনহাইড্রামিন সেবন করলে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। যেমন— খিঁচুনি, দ্রুত হৃদস্পন্দন, এমনকি কোমা পর্যন্ত হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিতভাবে দীর্ঘদিন ধরে ডাইফেনহাইড্রামিন গ্রহণ করেন, তাদের ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা টানা তিন বছর বা তার বেশি সময় ধরে এই ওষুধ সেবন করেছেন, তাদের ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভবনা ৫৪ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডাইফেনহাইড্রামিন-এর পরিবর্তে দ্বিতীয় প্রজন্মের অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ গ্রহণ করা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। যেমন— লোরাটাদিন (Loratadine), সেটিরিজিন (Cetirizine) এবং ফেক্সোফেনাডিন (Fexofenadine)।
কারণ এই ওষুধগুলো মস্তিষ্কে কম প্রভাব ফেলে।
সুতরাং, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। আপনার কোনো স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা থাকলে, অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক