ডেমোক্রেটদের ‘লড়াইয়ের’ অভাব, ক্ষোভ ঝরল টাউন হল মিটিংয়ে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেট দলের জনপ্রতিনিধিদের প্রতি ভোটারদের অসন্তোষ বাড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেট দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠিত ‘টাউন হল মিটিং’-গুলোতে ভোটাররা তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। তারা মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ডেমোক্রেটরা যথেষ্ট জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া কয়েকটি ‘টাউন হল মিটিং’-এ ভোটারদের বক্তব্যে এই অসন্তোষের চিত্র ফুটে উঠেছে। এর কারণ হিসেবে অনেকে ডেমোক্রেট দলের দুর্বল নেতৃত্ব এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মোকাবিলায় সুস্পষ্ট কৌশলের অভাবকে দায়ী করেছেন। জনসাধারণের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন রিপাবলিকানদের মোকাবিলায় ডেমোক্রেটরা তেমন সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারছে না।

আরিজোনার সিনেটর মার্ক केली এবং রুবেন গ্যালেগোর প্রতি ভোটারদের অভিযোগ ছিল, তাঁরা যেন রিপাবলিকানদের সঙ্গে আরো কঠোরভাবে মোকাবিলা করেন। মেরিল্যান্ডের প্রতিনিধি গ্লেন আইভের প্রতি এক ব্যক্তির মন্তব্য ছিল, “আমরা আশা করি আপনি রিপাবলিকানদের মতো কৌশলগত দক্ষতা দেখাবেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ডেমোক্রেট দল এখন ফেডারেল সরকারের ক্ষমতার বাইরে রয়েছে এবং তাদের মধ্যে একটি স্পষ্ট নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। দলের মধ্যে আদর্শগত বিভাজনও দেখা যাচ্ছে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নিতে বাধা সৃষ্টি করছে। আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে (midterm elections) ভালো ফল করার জন্য দলটিকে একটি সুসংহত কৌশল তৈরি করতে হবে।

ডেমোক্রেট দলের জনপ্রতিনিধি ও ভোটারদের মধ্যে এই উত্তেজনা এমন এক সময়ে দেখা যাচ্ছে, যখন রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট স্বল্প-মেয়াদি একটি সরকারি ব্যয় প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে সরকারে অচলাবস্থা (government shutdown) এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

রিপাবলিকান নেতারা তাদের দলের প্রতিনিধিদের এই সপ্তাহে ‘টাউন হল মিটিং’ আয়োজন করতে নিষেধ করেছিলেন। কারণ, তাঁরা আশঙ্কা করছিলেন, ট্রাম্প এবং প্রযুক্তি বিলিয়নেয়ার এলন মাস্ক ফেডারেল সরকারের ব্যয় হ্রাস এবং সরকারের পুনর্গঠন করার চেষ্টা করছেন, যা নিয়ে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে।

তবে, রিপাবলিকানদের অনুপস্থিতিতে ডেমোক্রেটরা ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রিপাবলিকানদের সরকারের ব্যয় পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু, অনেক স্থানে ডেমোক্রেটদের প্রতি জনগণের ক্ষোভ প্রকাশ পাওয়ায় মনে হচ্ছে, তাঁরা তেমন কোনো রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে পারেননি।

সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন জনগণের মধ্যে ডেমোক্রেট দলের জনপ্রিয়তা কমে এসেছে। দলের প্রতি অসন্তুষ্ট সমর্থকদের কারণে এই অবনতি হয়েছে। ডেমোক্রেট সমর্থকরা মনে করেন, দলের উচিত রিপাবলিকানদের এজেন্ডা রুখে দেওয়ার চেষ্টা করা, তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে কিছু বিষয় বাস্তবায়নের চেয়ে।

ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বিভিন্ন স্থানে র‍্যালি করছেন, যেখানে তিনি “ফাইটিং অলিগার্কি” (Fighting Oligarchy) নামে একটি প্রচারণা চালাচ্ছেন। নিউইয়র্কের প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজও এই প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। যদিও দলের কিছু অংশের মধ্যে এই ধরনের কার্যক্রম নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে।

টাউন হল মিটিংগুলোতে ভোটাররা ডেমোক্রেটদের প্রতি তাদের হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা মনে করেন, ডেমোক্রেটরা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে যথেষ্ট কঠোর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, অ্যারিজোনায় মার্ক केली এবং রুবেন গ্যালেগো যখন মেডিকেয়ার (Medicaid) সংরক্ষণে রিপাবলিকানদের রাজি করানোর কথা বলেন, তখন এক ভোটার তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “কখন তাঁরা তাঁদের মুখোশ খুলবেন এবং কিছু করবেন?”

বিভিন্ন টাউন হল মিটিংয়ে ভোটারদের বক্তব্যে ডেমোক্রেট দলের দুর্বলতা এবং কার্যকর বার্তার অভাবের বিষয়টিও উঠে এসেছে। জনগণের ধারণা, ডেমোক্রেটদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বের অভাব রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *