ডেমোক্র্যাটদের বিভাজন: একটি শব্দই যেন সব!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের কৌশল নিয়ে বিভেদ।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন আলোচনার বিষয় হলো, ২০২৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি কীভাবে তাদের কৌশল সাজাবে। দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য দ্বিতীয় মেয়াদে গৃহীত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ডেমোক্রেটদের মধ্যে বিভেদ দেখা দিয়েছে।

দলের নেতারা মনে করেন, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়াই হবে প্রধান কৌশল। অন্যদিকে, অনেকে মনে করেন, ট্রাম্পের পদক্ষেপগুলো আসলে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হানছে, তাই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ডেমোক্রেটিক পার্টির এই বিভেদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডেমোক্রেটদের একটি অংশ, বিশেষ করে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা মনে করেন, ট্রাম্পের বিতর্কিত পদক্ষেপগুলো—যেমন, বিভিন্ন শহরে সামরিক বাহিনী মোতায়েন—আসলে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।

তাদের মতে, এর মূল লক্ষ্য হলো— জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যখাতে কাটছাঁট এবং অন্যান্য বিষয় থেকে মানুষের মনোযোগ সরানো। এই নেতারা মনে করেন, ২০২৬ সালের নির্বাচনে ভোটারদের সমর্থন পেতে হলে অর্থনীতিকে প্রধান্য দিতে হবে।

তবে দলের ভেতরে ভিন্ন মত রয়েছে। অনেক ডেমোক্রেট মনে করেন, ট্রাম্পের এই ধরনের পদক্ষেপগুলো আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ। তাঁদের মতে, ট্রাম্পের ক্ষমতা ধরে রাখার এই চেষ্টা রুখতে হলে, তাঁর গণতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

তাঁদের মতে, ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ‘দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানো’ হিসেবে দেখাটা ভুল।

এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে একটি শব্দ—’ডিস্ট্রাকশন’ বা ‘অন্য দিকে মনোযোগ’। ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা প্রায়ই ট্রাম্পের বিতর্কিত পদক্ষেপগুলোকে ‘ডিস্ট্রাকশন’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

তাঁদের মতে, এর মাধ্যমে ট্রাম্প আসলে অন্য কিছু বিষয় থেকে মানুষের মনোযোগ ঘোরাতে চাইছেন। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেকেই একমত নন।

তাঁদের মতে, ট্রাম্পের আসল উদ্দেশ্য হলো—গণতন্ত্রের কাঠামো দুর্বল করা এবং নিজের ক্ষমতা সুসংহত করা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেমোক্রেটদের এই বিভেদ তাঁদের নির্বাচনী ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, যদি ডেমোক্রেটরা অর্থনৈতিক ইস্যুগুলোর ওপর বেশি জোর দেন, তাহলে তাঁরা নির্বাচনে ভালো ফল করতে পারেন।

কারণ, ভোটারদের একটি বড় অংশ জীবনযাত্রার মানের উন্নতি চায়। অন্যদিকে, অনেকে মনে করেন, ট্রাম্পের গণতন্ত্রবিরোধী পদক্ষেপগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে, ভোটারদের মধ্যে দলটির দুর্বল ভাবমূর্তি তৈরি হতে পারে।

এই বিতর্কের কারণে ডেমোক্রেটিক পার্টিতে একটি বড় শূন্যতা তৈরি হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এবং ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিটজকারের মতো নেতারা ট্রাম্পের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে কথা বলছেন।

তাঁরা ট্রাম্পকে ‘স্বৈরাচারী’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ডেমোক্রেটদের এই বিভেদ শুধু তাঁদের দলের জন্য নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা মনে করেন, ডেমোক্রেটদের এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তাঁরা কোন পথে হাঁটবেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *