মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলের সিঁড়িতে ডেমোক্র্যাটদের প্রতিবাদ, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলের সিঁড়িতে এক ব্যতিক্রমী প্রতিবাদের সাক্ষী থাকল বিশ্ব। ডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতারা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নীতির বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভ জানাতে সেখানে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফ্রিস এবং সিনেটর কোরি বুকার।
রবিবার দিনের আলো ফোটার ঠিক আগে এই প্রতিবাদ শুরু হয়। কোরি বুকার একে ‘নৈতিক জরুরি অবস্থা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আসন্ন কংগ্রেস অধিবেশন শুরুর প্রাক্কালে তাঁরা এই প্রতিবাদে নেমেছেন, যেখানে রিপাবলিকান নেতারা ট্রাম্পের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।
কংগ্রেসের আসন্ন অধিবেশনে রিপাবলিকানরা ট্রাম্পের প্রস্তাবিত কর কর্তন এবং সীমান্ত সুরক্ষার মতো বিষয়গুলো দ্রুততার সঙ্গে পাশ করার চেষ্টা করবে। এর অংশ হিসেবে তারা প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ কাটছাঁট করার পরিকল্পনা করছে। ডেমোক্র্যাটদের আশঙ্কা, এই বাজেট কাটছাঁটের ফলে স্বাস্থ্যখাত এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কমতে পারে, যা সাধারণ মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হবে।
জেফ্রিস বলেন, “আমরা হয় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াব, নয়তো রিপাবলিকানদের এই নিষ্ঠুর বাজেট মেনে নিতে বাধ্য হব, যা তাদের বিলিয়নেয়ার বন্ধুদের বিশাল কর ছাড় দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
ডেমোক্র্যাট নেতারা মনে করেন, মেডিকেড (গরীবদের স্বাস্থ্য বীমা) এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কাটছাঁট না করে রিপাবলিকানদের পক্ষে এই বিশাল পরিমাণ অর্থ বাঁচানো সম্ভব নয়। যদিও হাউস স্পিকার মাইক জনসন মধ্যপন্থী রিপাবলিকানদের আশ্বাস দিয়েছেন যে, এই প্রোগ্রামগুলোতে কোনো পরিবর্তন আনা হবে না।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সিনেটর ক্রিস কুনস, অ্যাঞ্জেলা অলসোব্রুকস-সহ আরও অনেক ডেমোক্র্যাট এবং বিভিন্ন অধিকার কর্মী যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আমেরিকান ফেডারেশন অফ টিচার্সের প্রেসিডেন্ট র্যান্ডি উইনগার্টেন এবং মানবাধিকার আইনজীবী মায়া উইলি।
এই প্রতিবাদের আগে সিনেটর কোরি বুকার সেনেটে দীর্ঘ ২৫ ঘণ্টার ভাষণে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। এটিকে সিনেটের ইতিহাসে দীর্ঘতম বক্তৃতা হিসেবেও ধরা হয়।
কোরি বুকার জানান, দলের পক্ষ থেকে নতুন কিছু করার চেষ্টা হিসেবে তাঁরা এই প্রতিবাদে নেমেছেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, জনগণের কাছে তাঁদের বার্তা পৌঁছে দেওয়া।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, বিভিন্ন শহরে ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা তাঁদের সমর্থকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সেখানে অনেকেই জানতে চান, কেন তাঁদের প্রতিনিধিরা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে আরো জোরালো প্রতিবাদ জানাচ্ছেন না। ওয়াশিংটন রাজ্যের ডেমোক্রেট প্রতিনিধি মারি গ্লুয়েসেনক্যাম্প পেরেজ এর জবাবে বলেন, “চিৎকার করা বা রেগে যাওয়া তাৎক্ষণিক ভালো লাগতে পারে, তবে এটি কি দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ কোনো কৌশল?”
অন্যদিকে, সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমারকে নিয়েও দলের মধ্যে ভিন্ন মত দেখা গেছে। গত মাসে, সরকার বন্ধের আশঙ্কায় রিপাবলিকানদের একটি বিল আটকাতে রাজি হননি তিনি। যদিও সিনেটের নয় জন সদস্য বাদে প্রায় সবাই বিলটির বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।
শুমার অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি এখনও দলের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন