ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াই: গভর্নরের আসনে সেই প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাটরা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন গভর্নর নির্বাচন: ডেমোক্র্যাটদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন গভর্নর নির্বাচনগুলো দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য এই নির্বাচনগুলো নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। এই নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে দলটির সামনে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটারদের মন জয় করার সুযোগ তৈরি হবে। খবরটি প্রকাশ করেছে সিএনএন।

ভার্জিনিয়ার অ্যাবিগেল স্প্যানবার্গার এবং নিউ জার্সির মিকি শেরিলসহ ডেমোক্রেটিক পার্টির কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা আসন্ন নির্বাচনে গভর্নর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো— অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। তারা মনে করেন, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হলে রাজ্যের ক্ষমতাকে আরও বেশি কাজে লাগাতে হবে।

২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। সেই সময় নিরাপত্তা বিষয়ক ব্যাকগ্রাউন্ডের অনেক প্রার্থী রিপাবলিকানদের আট বছরের শাসনকালের অবসান ঘটিয়েছিলেন। এবারও তেমনটা প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

আসন্ন নির্বাচনে স্প্যানবার্গার এবং শেরিল ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। শেরিল নিউ জার্সির আসন্ন প্রাইমারি নির্বাচনে জয়লাভের জন্য লড়ছেন, যেখানে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন জ্যাক কিয়াটারেলি। কিয়াটারেলিকে ট্রাম্পের সমর্থন থাকায় শেরিল তার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি ভোটারদের সতর্ক করে বলেছেন, কিয়াটারেলি নির্বাচিত হলে রাজ্যে ট্রাম্পের নীতি বাস্তবায়ন হবে। অন্যদিকে, স্প্যানবার্গার ভার্জিনিয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যেখানে তার রিপাবলিকান প্রতিপক্ষ লেফটেন্যান্ট গভর্নর উইনসাম আর্ল-সিয়ার্স।

এই দুই প্রার্থীই তাদের নিজ নিজ রাজ্যে ভোটারদের কাছে নিজেদের প্রমাণ করতে চাইছেন। তারা প্রমাণ করতে চান যে, প্রয়োজনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েও তারা কাজ করতে পারেন। স্প্যানবার্গার মনে করেন, “নীতিগতভাবে মানুষ আমাকে যে কোনও নামে ডাকুক না কেন, আমি মনে করি আমার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো ব্যবহারিক চিন্তা করা।

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাটাও তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গত নভেম্বরের নির্বাচনে অর্থনৈতিক ইস্যুতে ট্রাম্প ভোটারদের সমর্থন লাভ করেছিলেন। এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তারা কাজ করছেন। তাদের মতে, নির্বাচিত হলে তারা জনগণের জীবনে আরও বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারবেন।

নিউ জার্সিতে এক প্রচারণায় শেরিল বলেন, “এই মুহূর্তে লড়াইটা মূলত রাজ্যগুলোতে হচ্ছে, এটিই মূল ফ্রন্টলাইন। শক্তিশালী ডেমোক্রেটিক গভর্নররাই পারেন দেশকে ভালো পথে পরিচালিত করতে।

শেরিল আরও মনে করেন, ডেমোক্র্যাটদের তৃণমূল পর্যায় থেকে দল পুনর্গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, “আমাদের এমন নীতি গ্রহণ করতে হবে, যা ভোটারদের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ করবে এবং একটি কার্যকর সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে।

২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা ৪১টি আসন পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এর ফলস্বরূপ, নতুন ৬৭ জন সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তী সময়ে উচ্চ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, নিউ জার্সির অ্যান্ডি কিম এবং মিশিগানের এলিসা স্লোটকিন সিনেটে নির্বাচিত হয়েছেন। টেক্সাসের কলিন অলরেড, ফ্লোরিডার ডেবি মুকারসেল-পাওয়েল এবং ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাটি পোর্টার সিনেট নির্বাচনে পরাজিত হন।

অন্যদিকে, নিউ মেক্সিকোর প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব এবং প্রতিনিধি ডেব হ্যালান্ড, মিশিগানের ক্রিস পাপাস, মিনেসোটার অ্যাঞ্জি ক্রেইগসহ আরও কয়েকজন আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের প্রচারণার দায়িত্বে থাকা ড্যান সেনা মনে করেন, সেই সময়ের প্রার্থীরা ছিলেন “স্বাধীনচেতা, দেশের প্রতি দায়বদ্ধ।” তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের এমন প্রার্থী বাছাই করতে হবে, যারা দলের প্রতি সমর্থন জানাবেন এবং একইসঙ্গে দেশের প্রতিও দায়বদ্ধ থাকবেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অতীতে দেখা গেছে, যে দল হোয়াইট হাউস হারিয়েছে, তাদের দল থেকে পরবর্তী নির্বাচনে গভর্নর নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৩ সালে ভার্জিনিয়াতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী টেরি ম্যাকঅলিফ এবং ২০২১ সালে নিউ জার্সিতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ফিল মার্ফি জয়লাভ করেছিলেন।

ডেমোক্র্যাটরা মনে করছেন, আসন্ন নির্বাচনে তারা রিপাবলিকানদের কিছু বিতর্কিত নীতির সুযোগ নিতে পারেন। যেমন, স্বাস্থ্যখাত এবং খাদ্যভাতা কমানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তারা ভোটারদের কাছে তাদের অবস্থান তুলে ধরতে পারেন।

ইএমিলিস্টির প্রেসিডেন্ট জেসিকা ম্যাকলার বলেন, “এই নির্বাচনে জয়ী হতে হলে প্রার্থীদের ভোটারদের কাছে তাদের হয়ে লড়াই করার বিষয়টি তুলে ধরতে হবে।

রিপাবলিকানরাও তাদের কৌশল তৈরি করতে শুরু করেছে। তারা মনে করছে, টিপসের ওপর কর না রাখা এবং খাদ্যভাতার ওপর বিধিনিষেধের মতো বিষয়গুলো তারা ভোটারদের কাছে তুলে ধরবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্প্যানবার্গার এবং নিউ জার্সির ডেমোক্রেটিক গভর্নর প্রার্থীরা অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে দলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন।

শেয়ারিলের সমর্থক এবং শ্রমিক নেতা প্যাট্রিসিয়া ক্যাম্পোস-মেদিনা বলেছেন, “নিউজিল্যান্ডের ভোটারদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— জীবনযাত্রার ব্যয়, যেমন— আবাসন, পরিবহন এবং বিদ্যুতের বিলের খরচ কমানো।

মেকানিক্সভিলেতে এক প্রচারণায় স্প্যানবার্গার স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রেসক্রিপশন ওষুধের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দেন।

আশা করা যাচ্ছে, আসন্ন গভর্নর নির্বাচনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করবে এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *