মার্কিন তোপে ডেনমার্ক! গ্রিনল্যান্ড নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি

ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক বিতর্কে জড়িয়েছে ডেনমার্ক। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী লার্স রাসমুসেন যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, গ্রিনল্যান্ডে ডেনমার্কের বিনিয়োগ নিয়ে সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করার ধরণটা তাদের পছন্দ হয়নি।

সম্প্রতি গ্রিনল্যান্ডে এক সফরে গিয়ে দেশটির নিরাপত্তা নিয়ে ডেনমার্কের ‘অপর্যাপ্ত’ বিনিয়োগের অভিযোগ তোলেন তৎকালীন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভেন্স।

আর্টিক অঞ্চলে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড, বিশাল বরফের চাদরে ঢাকা একটি দ্বীপ, যা কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রচুর খনিজ সম্পদের সম্ভাবনা রয়েছে।

এই দ্বীপের নিরাপত্তা নিয়ে ডেনমার্কের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী লার্স রাসমুসেন এক ভিডিও বার্তায় জানান, ডেনমার্ক সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় এবং তাদের মিত্র হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু গ্রিনল্যান্ড ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের কথা বলার ধরনটা সঠিক ছিল না।

তিনি আরও বলেন, ডেনমার্ক আর্কটিক অঞ্চলের নিরাপত্তা জোরদারে অনেক বেশি বিনিয়োগ করছে। তাদের পক্ষ থেকে নতুন তিনটি নৌ জাহাজ, দূরপাল্লার ড্রোন এবং স্যাটেলাইট কেনা হচ্ছে, যার জন্য ১৪.৬ বিলিয়ন ডেনিশ ক্রোন (প্রায় ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ করা হয়েছে।

১৯৫১ সালের একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির কথা উল্লেখ করে রাসমুসেন জানান, এই চুক্তির মাধ্যমে গ্রিনল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র চায়, তাহলে বিষয়টি নিয়ে তারা আলোচনা করতে প্রস্তুত।

অন্যদিকে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভেন্স গ্রিনল্যান্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার কথা বলেন। তিনি ডেনমার্ককে গ্রিনল্যান্ডের জনগণের জন্য আরও বেশি কিছু করার আহ্বান জানান এবং গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানানোর ইঙ্গিত দেন।

তবে গ্রিনল্যান্ডের সংসদ সদস্য এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে এই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের পদক্ষেপকে ভালোভাবে নেয়নি।

গ্রিনল্যান্ডের পার্লামেন্টের পাঁচটির মধ্যে চারটি দল মিলে একটি নতুন সরকার গঠন করতে রাজি হয়েছে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।

ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনও এক বিবৃতিতে জানান, তার দেশ আর্কটিকে প্রতিরক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করছে এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের একজন ভালো ও শক্তিশালী মিত্র।

গ্রিনল্যান্ডের ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে আর্কটিক অঞ্চল দিন দিন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। একদিকে যেমন এখানে খনিজ তেল এবং গ্যাসের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে, তেমনই এই অঞ্চলের সামরিক গুরুত্বও বাড়ছে।

ডেনমার্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গ্রিনল্যান্ড নিয়ে এই বিতর্ক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *