ফ্লোরিডার ব্ল্যাক ইউনিভার্সিটির প্রধান পদে ডেসান্তিস! প্রতিবাদে ছাত্র ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা

ফ্লোরিডার একমাত্র সরকারি ‘হিস্টোরিক্যালি ব্ল্যাক কলেজ’-এর প্রধান হিসেবে ফ্লোরিডার গভর্নর ডেসান্টিসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মারভা জনসনকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্তে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই নিয়োগ নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী, প্রাক্তন ছাত্র এবং শিক্ষকরা।

ফ্লোরিডা এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটি (FAMU)-তে মারভা জনসনকে প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আগামী ১৮ই জুন ফ্লোরিডা বোর্ড অফ গভর্নরস-এর বৈঠকে এই বিষয়ে ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, প্রাক্তন ছাত্র এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের মূল উদ্বেগের কারণ, জনসনের সঙ্গে রিপাবলিকান গভর্নর রন ডেসান্টিসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ডেসান্টিস বিভিন্ন সময়ে এমন সব নীতি গ্রহণ করেছেন যা সংখ্যালঘুদের অধিকারের পরিপন্থী বলে অভিযোগ।

ঐতিহাসিকভাবে ব্ল্যাক কলেজ বা HBCU (Historically Black Colleges and Universities) হল এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যা একসময় কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল। আমেরিকার বর্ণবৈষম্যের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল এই HBCU-গুলি। ফ্লোরিডা এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটি (FAMU) তেমনই একটি ঐতিহ্যপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

মারভা জনসন বর্তমানে একটি টেলিযোগাযোগ সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি ফ্লোরিডা রাজ্য শিক্ষা বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সময়কালে তিনি গভর্নর ডেসান্টিসের বিভিন্ন নীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। সমালোচকদের মতে, জনসনের এই পদে নিয়োগ, ডেসান্টিসের শিক্ষানীতিরই প্রতিফলন।

শিক্ষার্থী এবং প্রাক্তন ছাত্রদের অভিযোগ, জনসনের নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতার অভাব ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ফোরামে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানানো হলেও, কর্তৃপক্ষের তরফে সেটিকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা, জনসনের এই নিয়োগের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক উইল প্যাকারের মতে, HBCU-গুলির উপর একটি ‘শত্রুভাবাপন্ন দখলদারিত্ব’ চালানোর চেষ্টা চলছে। তাঁর মতে, এমন একজন ব্যক্তি, যিনি বিভেদ সৃষ্টিকারী এবং বৈষম্যমূলক নীতির সঙ্গে যুক্ত, তাঁর এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব দেওয়া উচিত নয়।

মারভা জনসনকে এই পদে নিয়োগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অনলাইনে পিটিশনও জমা দেওয়া হয়েছে, যেখানে ১৮,০০০ এর বেশি স্বাক্ষর পড়েছে। এই নিয়োগের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এবং তাঁরা তাঁদের উদ্বেগের কথা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। মারভা জনসনের বার্ষিক বেতন প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।

ফ্লোরিডা এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা মনে করেন, এই নিয়োগের ফলে তাঁদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এবং শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাঁরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা করেছেন। এখন সবার দৃষ্টি ১৮ই জুনের বোর্ডের সিদ্ধান্তের দিকে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *