বাস্কেটবল বিশ্বে প্রায়ই এমন কিছু গল্প শোনা যায়, যা খেলাধুলার থেকেও বেশি কিছু। ডেট্রয়েট পিস্টনস-এর উত্থান তেমনই একটি কাহিনী, যা শুধু একটি দলের সাফল্যের গল্প নয়, বরং ঘুরে দাঁড়ানোর এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত।
গত মরসুমে টানা ২৮টি ম্যাচ হেরে যাওয়া দলটি এবারের মৌসুমে রীতিমতো উড়ছে, প্লে-অফের দৌড়ে তাদের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
গত বছর ডেট্রয়েট পিস্টনস-এর পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। মাঠের খেলায় তারা ছিল বেশ দুর্বল, সমর্থকেরা তাদের খেলা দেখে হতাশ হতেন।
এমন একটা পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, অনেকেই ভেবেছিলেন দলটির ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। কিন্তু নতুন মৌসুমে যেন সব হিসাব উল্টে গেল। দলটির পারফরম্যান্সে এসেছে ঈর্ষণীয় পরিবর্তন, যা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
এই সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন দলের তরুণ তারকা, কেইড কানিংহাম। ২০১৬ সালে ট্রয় ওয়েভার যখন কানিংহামকে দলে ভেড়ানোর জন্য একমত হন, তখন অনেকের মনেই প্রশ্ন ছিল।
কিন্তু কানিংহাম প্রমাণ করেছেন, কেন তিনি দলের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শুধু একজন খেলোয়াড় নন, বরং দলের নেতা হিসেবেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন। কানিংহামের অসাধারণ পারফরম্যান্সের সাথে দলের অন্য খেলোয়াড়দের মিলিত প্রয়াস দলটিকে সাফল্যের পথে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে।
দলের কোচ, জে.বি. বেকারস্টাফ-এর কৌশল এবং খেলোয়াড়দের প্রতি তার মনোযোগও এই সাফল্যের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করেছেন এবং তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছেন।
বেকারস্টাফের মতে, দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখাটা খুব জরুরি ছিল। খেলার দিনে তাদের মনোযোগ একই রকম রাখতে পেরেছেন তিনি।
এই মুহূর্তে ডেট্রয়েট পিস্টনস-এর প্লে-ইন টুর্নামেন্টে খেলার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত। এমনকি তারা শীর্ষ ৬-এ থেকে প্লে-অফে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে।
দলের জেনারেল ম্যানেজার ট্রাজন ল্যাংডন-এর মতে, এত দ্রুত এমন পরিবর্তন আসবে, তা তারা ভাবতেও পারেননি।
দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় টোবিয়াস হ্যারিস এবং টিম হার্ডওয়ে জুনিয়র-এর অভিজ্ঞতা তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দলের পারফরম্যান্সকে আরও উন্নত করেছে।
এছাড়া, জালেম ডুরেন-এর মতো তরুণ খেলোয়াড়রাও দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
ডিসেম্বরের ২৬ তারিখের একটি ম্যাচ ছিল ডেট্রয়েট পিস্টনস-এর জন্য টার্নিং পয়েন্ট। সেই ম্যাচে স্যাক্রামেন্টো কিংসের বিপক্ষে পিছিয়ে থেকেও তারা জয় ছিনিয়ে নেয়।
এরপর দলটি যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে।
ডেট্রয়েট পিস্টনস-এর এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম, দলের প্রতি ভালোবাসা এবং ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য ইচ্ছা। তাদের এই যাত্রা তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি দারুণ উদাহরণ, যারা জীবনে প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সাফল্যের জন্য চেষ্টা করে যেতে চায়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস