**ডিট্রয়েটের পুনর্জন্ম: বাংলাদেশের জন্য কি কোনো শিক্ষা আছে?**
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট শহর একসময় গাড়ির উত্পাদন শিল্পের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু একসময় এই শহরটি যেন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল।
শহরের জনসংখ্যা কমে গিয়েছিল, কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছিল, এবং শহরের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল। ২০১৩ সালে, ডেট্রয়েট ইতিহাসের বৃহত্তম পৌর দেউলিয়াত্বের শিকার হয়।
তবে, সেই অন্ধকার দিন পেরিয়ে শহরটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, যা অনেকের কাছে এক বিস্ময়কর ঘটনা।
ডেট্রয়েটের এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ। শহরের কেন্দ্রস্থলে নতুন একটি আকাশচুম্বী ভবন, যা “হাডসন’স ডেট্রয়েট” নামে পরিচিত, তা এই পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
১৪০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনে বিলাসবহুল দোকান, কনডোমিনিয়াম এবং একটি পাঁচ তারকা হোটেল তৈরি করা হয়েছে। শহরটির এই নতুন রূপান্তর শিল্পপতি ড্যান গিলবার্টের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিনিয়োগের ফল।
তিনি ডেট্রয়েটের পুনরুজ্জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
ডেট্রয়েটের ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে শুধু ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগই নয়, বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে এসেছে। জেনারেল মোটরস (জিএম) তাদের সদর দপ্তর হাডসন’স ডেট্রয়েটে সরিয়ে নিচ্ছে, যা ডেট্রয়েটের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এছাড়া, জেপি মরগান চেজ-এর মতো ব্যাংকও শহরে ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
তবে ডেট্রয়েটের এই উত্থান এখনো সম্পূর্ণ নয়। শহরের কেন্দ্র অঞ্চলের উন্নতি হলেও, অনেক এলাকা এখনো পিছিয়ে আছে।
শহরের কিছু অংশে দারিদ্র্য, কর্মসংস্থান সংকট এবং জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা এখনো বিদ্যমান।
ডেট্রয়েটের একটি বড় সমস্যা হলো, এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের তুলনায় বাইরের লোকজনের হাতে এখানকার বেশি আয়ের চাকরি। শহরের বাইরে থেকে আসা লোকেরা বেশি বেতন পান, যেখানে ডেট্রয়েটের বাসিন্দাদের আয় তুলনামূলকভাবে কম।
ডেট্রয়েটের এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য অনেক শিক্ষণীয় বিষয় নিয়ে আসে। একটি শহরের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টা কতটা জরুরি, তা ডেট্রয়েটের ঘটনা থেকে স্পষ্ট।
এছাড়া, শহরের উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করাটাও জরুরি। ডেট্রয়েটের এই উত্থান-পতন থেকে বাংলাদেশের শহরগুলো তাদের নিজস্ব উন্নয়নের পরিকল্পনা সাজাতে পারে।
বিশেষ করে, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ এবং সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ধারণাটি এক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ডেট্রয়েটের মেয়র পরিবর্তনের এই মুহূর্তে শহরের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, সেদিকে সবাই তাকিয়ে আছে। নতুন মেয়রকে নিশ্চিত করতে হবে যেন উন্নয়নের সুফল শুধু একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং তা সবার কাছে পৌঁছে যায়।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।