যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাস রাজ্যের একটি কারাগার থেকে ‘ডেভিল ইন দ্য ওজার্কস’ নামে পরিচিত এক কুখ্যাত কয়েদীর পালানোর ঘটনা ঘটেছে। অভ্যন্তরীণ তদন্তে জানা গেছে, কারাকর্তৃপক্ষের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে তিনি এই কাজ করেন।
কয়েদী গ্রান্ট হার্ডিন, যিনি একসময় পুলিশের প্রধান ছিলেন, কয়েক মাস ধরে এই পলায়নের পরিকল্পনা করছিলেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হার্ডিন কারাকক্ষে কাজ করতেন। সেখানে রান্নার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের নিরাপত্তা বিষয়ে চরম গাফিলতির কারণে তিনি পালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে সক্ষম হন।
কারাগারের কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, হার্ডিন প্রায় ছয় মাস ধরে তার পলায়নের ছক কষেন। তিনি একটি নকল পোশাক তৈরি করেন, যা দেখতে অনেকটা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ইউনিফর্মের মতো ছিল।
এই পোশাক বানানোর জন্য তিনি কারাকক্ষের আশেপাশে পাওয়া কালো মার্কার এবং কাপড় ব্যবহার করেন। এমনকি, ক্যান থেকে পাওয়া একটি ঢাকনা ব্যবহার করে তিনি একটি ভুয়া ব্যাজও তৈরি করেন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, হার্ডিন তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো কারাকক্ষের একটি ময়লার ঝুঁড়িতে লুকিয়ে রাখতেন, কারণ সেখানে কেউ তল্লাশি চালাত না।
পলায়নের সময় হার্ডিন কর্মকর্তাদের বলেন, গেট খোলার জন্য। আর সে অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোনো যাচাই-বাছাই না করেই গেট খুলে দেন।
পালানোর পর হার্ডিন ১২ দিন জঙ্গলে আত্মগোপন করে ছিলেন। এসময় তিনি কারাগার থেকে লুকিয়ে আনা খাবার খেয়ে এবং ঝর্ণা ও বনের ফলমূল সংগ্রহ করে জীবন ধারণ করেন।
এছাড়া, সিপ্যাপ (CPAP) মেশিন থেকে পাওয়া জলও পান করতেন তিনি।
হার্ডিন বর্তমানে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণেরও অভিযোগ রয়েছে।
‘ডেভিল ইন দ্য ওজার্কস’ শিরোনামে তার জীবন নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও তৈরি হয়েছে।
হার্ডিনের পালানোর ঘটনার পর কারা বিভাগের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গেট থেকে ইলেক্ট্রিক লক সরিয়ে ফেলা, যাতে কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকলে কেউ বের হতে না পারে।
এছাড়া, হার্ডিনের ব্যবহৃত ডকের দুর্বলতা চিহ্নিত করে সেখানে অতিরিক্ত ক্যামেরা স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে, কারাকক্ষের ভেতরের সব কক্ষে নিয়মিত তল্লাশি চালানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হার্ডিনকে বর্তমানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সম্পন্ন কারাগারে রাখা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে পলায়নের অভিযোগ আনা হয়েছে, যার বিচার আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস