ধনী বাবার ছেলেরা: ক্লাব সংস্কৃতিতে নতুনের আগমন?

বড়লোকদের হাত ধরে কি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে রাতের ঢাকার ক্লাব সংস্কৃতি? নাকি বাড়ছে বিভেদ?

ঢাকার রাতের সংস্কৃতি ধীরে ধীরে তার পুরোনো চেহারা হারাচ্ছে, এমন একটা ধারণা অনেকের মধ্যে। শহরের আনাচে কানাচে, পুরোনো ক্লাবগুলোতে ভিড় কমেছে, বাড়ছে নতুনত্বের চাহিদা।

এই পরিবর্তনের হাওয়ায়, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির ক্লাব সংস্কৃতিতে প্রবেশ নিয়ে উঠেছে বিতর্ক। তাদের এই আগমন কি এই সংস্কৃতিকে নতুন পথে চালিত করবে, নাকি তৈরি করবে বিভেদ?

লন্ডনের একটি আন্ডারগ্রাউন্ড মিউজিক ভেন্যু, ‘ভেন্যু মট’-এর মালিক জন মোহাম্মদের অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এক সময়ের গ্যারেজ, ‘ভেন্যু মট’ এখন রাতের সঙ্গীতের অন্যতম কেন্দ্র।

কিন্তু প্রতি মঙ্গলবার তিনি কর্মীদের সাথে বারে বসে গত সপ্তাহের লোকসান নিয়ে আলোচনা করেন। মূলত, আর্থিক অনিশ্চয়তা এই সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। অন্যদিকে, অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি এখন ক্লাব সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, যাদের মধ্যে কেউ কেউ বিশাল অঙ্কের অর্থের মালিক।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন অলি অ্যাশলি, যিনি স্পোর্টস ডিরেক্টের মালিক মাইক অ্যাশলির ছেলে।

অ্যাশলির একটি পুরনো রেডিও স্টেশন ছিল, যা বিভিন্ন বিতর্কের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। তিনি এখন ‘ভাইরাস’ নামে একটি ক্লাব নাইট চালান।

এছাড়াও, টেট্রা প্যাকের উত্তরাধিকারী ম্যাগনার রাউসিং একটি নতুন প্রকল্প ‘ফিগুরার’ জন্য অর্থ যোগান দেন। প্রশ্ন উঠেছে, এই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কি কেবল নিজেদের রুচি এবং খ্যাতির জন্য এই সংস্কৃতিতে প্রবেশ করছেন, নাকি এর মাধ্যমে তাঁরা একটি নতুন ধারার জন্ম দিতে চাইছেন?

সংগীত প্রযোজক রব ভেনিং মনে করেন, অতিরিক্ত অর্থ আসায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয় এবং এতে ছোট উদ্যোক্তাদের টিকে থাকতে সমস্যা হয়। কারণ, এতে করে ব্যবসার খরচ বেড়ে যায়।

অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করেন, এই ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা শিল্পের জন্য ইতিবাচক। এটি নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, ‘ফিগুরার’ প্রতিষ্ঠাতা জন বেকার জানান, রাউসিংয়ের আর্থিক সহায়তার কারণে তাঁরা পরীক্ষামূলক কাজ করতে পারছেন।

অন্যদিকে, অনেকে মনে করেন, ধনী ব্যক্তিদের এই অংশগ্রহণের ফলে স্থানীয় এবং ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

ডিজে এবং প্রযোজক আই জর্ডান মনে করেন, সমাজের ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাজেকর্মে জবাবদিহিতার অভাব দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, তিনি উল্লেখ করেন, কীভাবে তিনি একটি ভালো পারিশ্রমিকের বিনিময়ে লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপচার করেছেন।

তবে, এই বিতর্কের মাঝেও কিছু ইতিবাচক দিক দেখা যায়।

যারা এই সংস্কৃতিতে অর্থ বিনিয়োগ করছেন, তাঁদের অনেকে তরুণ প্রতিভাদের উৎসাহিত করতে চান এবং তাঁদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চান।

অলি অ্যাশলি যেমনটা বলেন, ‘ধনী পরিবারের উচিত এমন কিছু করা, যা মানুষকে আনন্দ দেয় এবং পছন্দের কাজ করতে উৎসাহিত করে।’

সবশেষে, প্রশ্নটি হলো, এই পরিবর্তন কি ঢাকার রাতের সংস্কৃতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে, নাকি এটি বিভেদের জন্ম দেবে?

হয়তো সময়ই এর উত্তর দেবে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *