মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বিষয়ক নজরদারি ব্যবস্থায় কাটছাঁট নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। প্রাক্তন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এই পদক্ষেপের ফলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা দুর্বল হয়ে পড়বে।
সম্প্রতি, অভিবাসন বিষয়ক কিছু তদারকি সংস্থার কর্মী সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্তের পর এই বিতর্ক আরও জোরালো হয়েছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (Department of Homeland Security – DHS), যা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক একটি মার্কিন সংস্থা, তাদের তদারকি বিষয়ক অফিসের কর্মীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে। এই পদক্ষেপের ফলে মানবাধিকার সংস্থাগুলি এবং মানবাধিকার বিষয়ক কর্মীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাদের মতে, এর ফলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমের ওপর নজরদারি কমে যাবে এবং অভিবাসন কেন্দ্রে থাকা মানুষের অধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে।
জানা গেছে, এই বছর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১১ জন অভিবাসনপ্রার্থীর মৃত্যু হয়েছে কর্তৃপক্ষের হেফাজতে। যদিও এই বছর শেষ হতে এখনো বেশ কয়েক মাস বাকি, তবুও গত অর্থবছরের (২০২৪) মোট মৃতের সংখ্যা (১২ জন) ছুঁই ছুঁই করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কর্মীদের ছাঁটাইয়ের ফলে অভ্যন্তরীণ তদারকির ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, যখন DHS-এর ওপর অভিবাসন সংক্রান্ত জটিল কার্যক্রম পরিচালনার চাপ বাড়ছে। এছাড়া, নতুন ডিটেনশন সেন্টার (detention center) বা আটক কেন্দ্র খোলারও পরিকল্পনা চলছে, যার মধ্যে ফ্লোরিডার এভারগ্লেডসে ‘অ্যালিগেটর আলকাট্রাজ’ নামে একটি কেন্দ্র অন্যতম।
অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী মিশেল ব্রানে (Michelle Brané), যিনি একসময় অভিবাসন বিষয়ক ডিটেনশন ওম্বুডসম্যান (Ombudsman) হিসেবে কাজ করেছেন, তিনি মনে করেন, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। তার মতে, এই পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
কর্মকর্তাদের ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এর ফলে আটক কেন্দ্রগুলোতে অমানবিক পরিবেশ, চিকিৎসা অবহেলা এবং নির্যাতনের মতো ঘটনা বেড়ে যেতে পারে। মানবাধিকার সংস্থা ‘রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস’-এর মতো সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে।
অন্যদিকে, DHS-এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কর্মীদের ছাঁটাইয়ের ফলে কাজের দক্ষতা বাড়বে এবং বিভাগের মূল উদ্দেশ্য— সীমান্ত নিরাপত্তা ও অভিবাসন কার্যক্রম— আরও ভালোভাবে সম্পন্ন করা যাবে।
তবে সমালোচকদের মতে, DHS-এর অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম তাদের দাবির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাদের অভিযোগ, তদারকি ব্যবস্থা দুর্বল করার চেষ্টা চলছে।
আদালতের নথিপত্র অনুযায়ী, গত মার্চ মাসে কর্মীদের অপসারণের মাধ্যমে মানবাধিকার বিষয়ক অফিস (Office for Civil Rights and Civil Liberties), সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস ওম্বুডসম্যান (Citizenship and Immigration Services Ombudsman – CISOMB), এবং ইমিগ্রেশন ডিটেনশন ওম্বুডসম্যান (Office of the Immigration Detention Ombudsman – OIDO) এর কার্যক্রম কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে, এই অফিসগুলোর কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছে। মামলাকারীদের অভিযোগ, কংগ্রেস কর্তৃক গঠিত এই অফিসগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল অভিবাসন বিষয়ক কার্যক্রমের ওপর স্বাধীনভাবে নজরদারি করা, মানবাধিকার বিষয়ক অভিযোগের তদন্ত করা এবং DHS-এর মধ্যে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন