বিশ্বের দীর্ঘতম ফ্লাইট: ১৮ ঘণ্টার বেশি! কিভাবে যাত্রা সহজ করবেন?

বিশ্বজুড়ে বিমানের যাত্রাপথগুলি এখন যেন সময়ের সীমা অতিক্রম করছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে, বিমান সংস্থাগুলি এখন এমন সব রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে যা একসময় কল্পনার বাইরে ছিল।

সিঙ্গাপুর থেকে নিউ ইয়র্ক অথবা অকল্যান্ড থেকে দোহা – একটানা দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এই ফ্লাইটগুলো এখন বেশ পরিচিত। আজকের লেখায় আমরা তেমনই কিছু দীর্ঘতম বিমান ভ্রমণের গল্প নিয়ে আলোচনা করব, সেই সঙ্গে জানব কীভাবে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া যায়, যা আমাদের বাংলাদেশী পাঠকদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে, বিশ্বের দীর্ঘতম বিমান যাত্রাগুলির মধ্যে অন্যতম হল সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের নিউ ইয়র্ক (জেএফকে) থেকে সিঙ্গাপুরের (এসআইএন) ফ্লাইট। এই রুটে একটি এয়ারবাস এ350-900 ইউএলআর (ULR) বিমান ব্যবহার করা হয়, যা প্রায় ৯,৫৩৬ মাইল পথ পাড়ি দেয় এবং সময় লাগে ১৮ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।

এই বিমানে বিজনেস ক্লাস এবং প্রিমিয়াম ইকোনমি সিট রয়েছে, যা যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।

একই এয়ারলাইন্সের আরেকটি ফ্লাইট সিঙ্গাপুর থেকে নিউয়ার্কের (ইডব্লিউআর) দিকে যায়, যা প্রায় ১৮ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে ৯,৫২৩ মাইল পথ অতিক্রম করে। এছাড়াও, এয়ার নিউজিল্যান্ড এবং কান্তাস এয়ারলাইন্সের নিউ ইয়র্ক (জেএফকে) থেকে অকল্যান্ডের (একেওএল) ফ্লাইটটি ১৮ ঘণ্টার এবং ৮,৮২৮ মাইল পথ অতিক্রম করে।

এই রুটে বোয়িং 787-9 ড্রিমলাইনার বিমান ব্যবহার করা হয়।

দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইটের তালিকায় আরও আছে সান ফ্রান্সিসকো (এসএফও) থেকে বেঙ্গালুরুর (বিএলআর) এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট, যা ১৭ ঘণ্টা ৫৫ মিনিটে ৮,৭০১ মাইল পাড়ি দেয়। এই রুটে বোয়িং 777-200LR বিমান ব্যবহার করা হয়।

লস অ্যাঞ্জেলেস (এলএএক্স) থেকে সিঙ্গাপুরের (এসআইএন) সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি ১৭ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটে ৮,৭৬২ মাইল পথ অতিক্রম করে। কান্তাস এয়ারলাইন্সের ডালাস (ডিএফডব্লিউ) থেকে মেলবোর্ন (এমইএল) এবং পার্থ (পিইআর) থেকে লন্ডনের (এলএইচআর) ফ্লাইট দুটিও যথাক্রমে ১৭ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট এবং ১৭ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের দীর্ঘ যাত্রা।

দীর্ঘ ভ্রমণের এই তালিকায় আরও আছে কান্তাসের ডালাস (ডিএফডব্লিউ) থেকে সিডনির (এসওয়াইডি) ফ্লাইট, যা ১৭ ঘণ্টা ১৫ মিনিটে ৮,৫৮০ মাইল পাড়ি দেয়। কাতার এয়ারওয়েজের অকল্যান্ড (একেএল) থেকে দোহা (ডিওএইচ) এবং এমিরেটস এয়ারলাইন্সের অকল্যান্ড (একেএল) থেকে দুবাই (ডিএক্সবি) ফ্লাইট দুটিও যথাক্রমে ১৭ ঘণ্টা ২০ মিনিট এবং ১৭ ঘণ্টা ৫ মিনিটের দীর্ঘ যাত্রা।

দীর্ঘ ভ্রমণের সময় স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখা খুবই জরুরি। এই বিষয়ে, খাদ্য ও পুষ্টিবিদ লরেন মানাকারের পরামর্শ হল, হালকা খাবার গ্রহণ করা, যা সহজে হজম হয় এবং শরীরে শক্তি যোগায়।

ভ্রমণের সময় প্রচুর পরিমাণে জল পান করা এবং ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় গ্রহণ করা শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্রমণের সময় গন্তব্যের সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমের অভ্যাস করা উচিত। ঘুমের জন্য আই মাস্ক এবং কানের প্লাগ ব্যবহার করা যেতে পারে।

জেট ল্যাগ কমাতে ঘুমের ওষুধ হিসেবে মেলাটোনিন ব্যবহারের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

এই দীর্ঘ ভ্রমণগুলি আমাদের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া যাত্রীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। যারা কাজের সূত্রে, শিক্ষার জন্য বা পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে সুদূর গন্তব্যে পাড়ি দেন, তাদের জন্য এই ফ্লাইটগুলি সময় এবং সুযোগের নতুন দ্বার খুলে দেয়।

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *