ডায়মন্ড চোরেরা: কোথায় তারা, কিভাবে কাটছে জীবন?

বহু বছর আগের কথা, ২০০০ সালের নভেম্বরে লন্ডনের আকাশে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার জন্ম হয়। মিলিনিয়াম ডোম-এ (বর্তমানে ও২ এরিনা) রাখা ছিল বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান হীরা, ‘ডি বিয়ার্স মিলিনিয়াম স্টার’।

এর আনুমানিক মূল্য ছিল প্রায় ৪৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় হিসাব করলে বিশাল এক অঙ্ক দাঁড়ায়— পাঁচ হাজার কোটির বেশি! এই মূল্যবান হীরাটি চুরি করার এক দুঃসাহসিক পরিকল্পনা করা হয়, যা পরবর্তীতে ‘ডায়মন্ড হেইস্ট’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া একটি তথ্যচিত্র এই ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেছে, যা দর্শকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

এই চুরির পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন লি ওয়েনহাম। তার নেতৃত্বে আরও কয়েকজন কুখ্যাত অপরাধী এই কাজে যুক্ত ছিলেন, যাদের স্থানীয়ভাবে ‘ডায়মন্ড গিজারস’ নামে ডাকা হতো।

তাদের মূল লক্ষ্য ছিল, ডোম-এর সুরক্ষিত ভল্ট থেকে হীরাটি চুরি করা। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা একটি খননযন্ত্র (জেসিবি) ব্যবহার করে ডোম-এর প্রবেশপথ ভাঙার চেষ্টা করে।

এছাড়াও, তারা নিরাপত্তা কর্মীদের ফাঁকি দেওয়ার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে।

তবে, তাদের এই পরিকল্পনা পুরোপুরি সফল হয়নি। ব্রিটিশ পুলিশ আগে থেকেই তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছিল।

ঘটনার কয়েক মাস আগে থেকেই তারা এই চুরির ব্যাপারে খবর পেয়ে যায় এবং ‘অপারেশন ম্যাজিশিয়ান’ নামে একটি অভিযান শুরু করে।

পুলিশের তৎপরতার কারণে আসল হীরা সরিয়ে সেখানে নকল হীরা রাখা হয়। ঘটনার দিন, যখন চোরেরা ভল্টে প্রবেশ করে, তখন পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।

এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল রে বেটসন, যিনি ছিলেন মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন। তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই বিভিন্ন অপরাধের রেকর্ড ছিল।

এছাড়া, রবার্ট ‘বব দ্য বিল্ডার’ অ্যাডামস, উইলিয়াম ‘বিল’ ককরাম, অ্যালডো সিয়ারোচ্চি, টেরেন্স ‘টেরি’ মিলম্যান এবং কেভিন মেরেডিথ-এর মতো আরও কয়েকজন এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল।

এদের মধ্যে কেউ ছিলেন বুলডোজার চালক, কেউ হাতুড়ি দিয়ে কাঁচ ভাঙার কাজে পারদর্শী, আবার কেউ ছিলেন বোমা নিক্ষেপে দক্ষ।

গ্রেপ্তারের পর, অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় মামলা হয়। বিচারের সময়, টেরেন্স মিলম্যান ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

বাকিদের মধ্যে রে বেটসন এবং উইলিয়াম ককরামকে ষড়যন্ত্র ও ডাকাতির অভিযোগে ১৮ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যা পরে ১৫ বছরে কমিয়ে আনা হয়।

রবার্ট অ্যাডামসকে ১৫ বছর এবং অ্যালডো সিয়ারোচ্চিকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কেভিন মেরেডিথকে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে অনেকেই এখন মুক্তি পেয়েছেন। তবে, তাদের জীবন আগের মতো নেই।

রে বেটসন বর্তমানে অন্য একটি ডাকাতির মামলায় জেলে আছেন। লি ওয়েনহাম জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর লেখক এবং ল্যান্ডস্কেপার হিসেবে কাজ করছেন।

তিনি তার আত্মজীবনী ‘এ ডায়মন্ড গিজার’ এর মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেছেন। অ্যালডো সিয়ারোচ্চি তার পরিবারের জন্য একটি স্কেট পার্ককে অবকাশ যাপন কেন্দ্রে পরিণত করেছেন।

এই ঘটনা শুধু একটি চুরির চেষ্টা ছিল না, বরং এটি ছিল এক জটিল অপরাধ চক্রের উন্মোচন, যা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

এত বড় একটি চুরির পরিকল্পনা এবং তা ব্যর্থ হওয়ার ঘটনা আজও মানুষের মনে কৌতুহল জাগায়। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘ডায়মন্ড হেইস্ট’ তথ্যচিত্রটি বর্তমানে দর্শকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।

তথ্য সূত্র: পিপলস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *