আলোচনা: ডির বিচার, ক্যাসির লড়াই, আর প্রতিশোধের আশায় যৌন নির্যাতনের শিকার নারীরা

শিরোনাম: ক্যাসির মামলার সূত্রে যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই, আইন ও অধিকারের প্রশ্ন

সম্প্রতি, সঙ্গীত শিল্পী ক্যাসান্ড্রা ভেনচুরার (ক্যাসি) করা যৌন নির্যাতনের অভিযোগের মামলাটি আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। এই মামলার সূত্রে, যৌন সহিংসতার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের আইনি অধিকার এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার লড়াই নতুন করে সামনে এসেছে।

বিশেষ করে, পুরনো ঘটনার বিচারের সুযোগ তৈরি করা বিষয়ক আইন (লুকব্যাক উইন্ডো) নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে, যা ভুক্তভোগীদের সুবিধার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ক্যাসি ভেনচুরার করা মামলায়, সঙ্গীত প্রযোজক ও শিল্পী শন ‘ডিiddy’ কম্বসের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়। যদিও ডিiddy-কে গুরুতর অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তবে এই মামলার মাধ্যমে নারীদের প্রতি হওয়া সহিংসতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে।

নিউইয়র্কের ‘অ্যাডাল্ট সারভাইভার্স অ্যাক্ট’-এর মতো আইনগুলো, অতীতে হওয়া যৌন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের বিচার পাওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে। এর ফলে, ভুক্তভোগীরা নির্দিষ্ট সময়সীমার (লুকব্যাক উইন্ডো) মধ্যে মামলা করার সুযোগ পান।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৬৯ সেকেন্ডে একজন ব্যক্তি যৌন নির্যাতনের শিকার হন। ‘রেপ, অ্যাবিউজ অ্যান্ড ইনসেস্ট ন্যাশনাল নেটওয়ার্ক’ (RAINN)-এর তথ্য অনুযায়ী, এই ধরনের সহিংসতার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য বিভিন্ন সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে।

তবে, শুধু আইন তৈরি করাই যথেষ্ট নয়। আইনজীবীরা বলছেন, এই ধরনের আইন হওয়া সত্ত্বেও, বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বাধা রয়েছে। বিশেষ করে, কিছু ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়।

উদাহরণস্বরূপ, মাদক সেবনের কারণে সম্মতি দেওয়ার অক্ষমতা (intoxication loophole) সংক্রান্ত বিষয়গুলো অনেক সময় বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করে। টেক্সাস সম্প্রতি এই ধরনের একটি ফাঁক বন্ধ করেছে, যেখানে সম্মতি সম্পর্কিত সংজ্ঞাটি আরও বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে।

যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘মি টু’ আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই আন্দোলনের মাধ্যমে, নারীরা তাঁদের উপর হওয়া নির্যাতনের কথা প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেন এবং এর ফলস্বরূপ, অনেক দেশে আইন পরিবর্তন হয়েছে।

নিউইয়র্কের অ্যাসেম্বলিওম্যান লিন্ডা রোজেনথাল-এর মতে, ‘মি টু’ আন্দোলনের কারণে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া শিশুদের জন্য আইন তৈরি করা সহজ হয়েছে।

আন্দোলনকারীরা মনে করেন, এই লড়াইয়ে জনসাধারণের সমর্থন ধরে রাখা এবং আরও বেশি সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা জরুরি। ক্যাসির মামলাটি, সেই অর্থে, একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

কারণ, এর মাধ্যমে ভুক্তভোগীরা তাঁদের কথা বলার সাহস পেয়েছেন এবং সমাজের মানুষও তাঁদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে।

যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে, বিদ্যমান আইনের দুর্বলতাগুলো দূর করা এবং নতুন আইন তৈরি করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে, ভুক্তভোগীদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা এবং আইনি পরামর্শের ব্যবস্থা করা দরকার।

এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করা গেলে, ভবিষ্যতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে পারবেন।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *