শীর্ষ সঙ্গীত প্রযোজক এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব শন “ডিডি” কম্বসের বিরুদ্ধে শুরু হতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত ফেডারেল বিচার। যৌন ব্যবসা, মানব পাচার এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত এই তারকার বিচারকার্য সোমবার থেকে শুরু হতে যাওয়া কথা রয়েছে, যেখানে জুরি নির্বাচনের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
কম্বস তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটান ফেডারেল আদালতে এই বিচার অনুষ্ঠিত হবে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, শুনানির শুরুতে আগামী ১২ই মে বক্তব্য পেশ করা হবে।
বিচার চলাকালীন সময়ে আদালতের কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচারিত হবে না।
দোষী সাব্যস্ত হলে, কম্বসকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, কম্বস ২০০৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য ব্যবহার করে একটি অপরাধ চক্র তৈরি করেন।
এর মাধ্যমে তিনি যৌন ব্যবসা, জোরপূর্বক শ্রম, অপহরণ, অগ্নিসংযোগ, ঘুষ এবং বিচারের কাজে বাধা দেওয়ার মতো অপরাধ করেছেন।
প্রসিকিউটরদের দাবি, তিনি অন্তত তিনজন নারীকে তার সঙ্গে এবং কখনও কখনও পুরুষ যৌনকর্মীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করেন।
ভুক্তভোগীদের মাদকদ্রব্য খাইয়ে দিনের পর দিন যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করা হতো।
কর্তৃপক্ষের ধারণা, কম্বস কিছু যৌন কাজের ভিডিও ধারণ করেছেন এবং আর্থিক ও ক্যারিয়ারের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি সহিংসতার হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগীদের নিয়ন্ত্রণ করতেন।
কম্বসের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর মধ্যে “ভিকটিম ১”, “ভিকটিম ২” এবং “ভিকটিম ৩”-এর সঙ্গে সম্পর্কিত একটি অভিযোগ হলো অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র।
এছাড়াও, “ভিকটিম ১” এবং “ভিকটিম ২”-এর সঙ্গে জোরপূর্বক, প্রতারণা ও প্ররোচনার মাধ্যমে মানব পাচারের দুটি অভিযোগ এবং “ভিকটিম ১” ও “ভিকটিম ২”-কে দিয়ে পতিতাবৃত্তি করানোর জন্য তাদের পরিবহনের দুটি অভিযোগ রয়েছে।
আদালতের নথিতে প্রসিকিউটররা বলেছেন, “ভিকটিম ৪” হলেন কম্বসের প্রাক্তন কর্মচারী, যার কাছ থেকে তিনি “জোরপূর্বক শ্রম” আদায় করতেন।
জানা গেছে, সরকার কর্তৃক চিহ্নিত চার ভুক্তভোগীকে এই বিচারে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।
বিচারক অরুণ সুব্রামানিয়ান ইতোমধ্যে রায় দিয়েছেন যে, চারজনের মধ্যে তিনজন ভুক্তভোগীকে ছদ্মনাম ব্যবহার করে সাক্ষ্য দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।
তবে, অভিযোগপত্রে “ভিকটিম ১” হিসাবে উল্লিখিত কম্বসের প্রাক্তন প্রেমিকা ক্যাসি ভেন্টুরা তার আসল নামেই সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়েছেন।
২০২৩ সালে ভেন্টুরা কম্বসের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন, যেখানে তিনি অভিযোগ করেন যে ২০১৮ সালে তিনি কম্বসের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন এবং তাদের সম্পর্কের সময়কালে বারবার শারীরিক ও অন্যান্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
ঘটনার দিনই ভেন্টুরার সঙ্গে হওয়া এই মামলার মীমাংসা করেন কম্বস।
২০১৬ সালের একটি ভিডিওতে কম্বসকে ভেন্টুরার উপর হামলা করতে দেখা যায়, যা সিএনএন প্রথম প্রকাশ করে।
ভিডিওটি প্রকাশের দুদিন পর কম্বস ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করে ভেন্টুরার উপর শারীরিক আক্রমণের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং তার “পূর্ণ দায়িত্ব” নেওয়ার কথা বলেছিলেন।
এপ্রিল মাসের একটি প্রি-ট্রায়াল শুনানিতে বিচারক সুব্রামানিয়ান রায় দেন যে, ২০১৬ সালের ঘটনার ফুটেজ বিচার চলাকালীন সময়ে জুরিদের দেখানো যেতে পারে।
মার্ক অ্যাগনিফিলো এবং টেনি গেরা গস কম্বসের প্রধান আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন।
র্যাপার ইয়ং থাগের একটি মামলার আইনজীবী ব্রায়ান স্টিলও এপ্রিল মাসে কম্বসের আইনি দলে যোগ দিয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি অফিসের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অফ নিউ ইয়র্ক এই মামলাটি পরিচালনা করছে।
মেরডিথ ফস্টার, এমিলি এ. জনসন, ক্রিস্টি স্লাভিক, ম্যাডিসন রেডিক স্মাইসার এবং মিতজি স্টেইনার সহকারি ইউএস অ্যাটর্নি হিসেবে এই মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
আলাদাভাবে, কম্বসের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে আরও বেশ কয়েকটি দেওয়ানি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তবে, এই দেওয়ানি মামলাগুলো ফেডারেল ফৌজদারি বিচারের অংশ নয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন