বিখ্যাত র্যাপার ও প্রযোজক শন ‘ডিডি’ কম্বস-এর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন পাচার ও ব্ল্যাকমেইলিং মামলার শুনানিতে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেশ করেছেন তাঁরই সাবেক সহযোগী। মঙ্গলবার ম্যানহাটনের ফেডারেল আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে, কম্বসের সাবেক সহযোগী ক্যাপ্রিকর্ন ক্লার্ক জানান, ডিডি তাঁর কর্মজীবনের প্রথম দিনেই তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন।
শুধু তাই নয়, কয়েক বছর পর র্যাপার কিড কুডিকে খুঁজে বের করে হত্যার উদ্দেশ্যে তিনি ক্লার্ককে বন্দুকের মুখে অপহরণ করেন।
আদালতে ক্লার্ক জানান, একসময় তিনি ডিডির ‘ব্যাড বয় এন্টারটেইনমেন্ট’-এর বৈশ্বিক ব্র্যান্ড ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করতেন। ক্লার্কের সাক্ষ্য অনুযায়ী, ডিডি র্যাপার কিড কুডির ওপর অত্যন্ত ক্ষিপ্ত ছিলেন, কারণ কুডি তাঁর বান্ধবী, জনপ্রিয় আরঅ্যান্ডবি শিল্পী ক্যাসি ভেন্টুরার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন।
ক্লার্ক জানান, ডিডি তাঁকে নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠান এবং একটি বন্দুক হাতে নিয়ে কুডিকে ‘খুন করার’ জন্য তাঁর সঙ্গে যেতে বলেন।
ক্লান্ত ও ভীত কণ্ঠে ক্লার্ক বর্ণনা করেন, এরপর তাঁরা একটি কালো ক্যাডিলাক এসকালেডে করে লস অ্যাঞ্জেলেসে কুডির বাড়ির দিকে রওনা হন। সেখানে পৌঁছে ডিডি ও তাঁর দেহরক্ষী কুডির বাড়িতে প্রবেশ করেন, আর ক্লার্ককে গাড়িতে বসিয়ে রাখা হয়।
ক্লার্ক জানান, তখন তিনি ক্যাসিকে ফোন করে ডিডির পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি ক্যাসিকে বলেছিলেন, ডিডি তাঁকে বন্দুক দেখিয়ে কুডির বাড়িতে নিয়ে এসেছেন এবং তাকে মারতে চান।
ক্লার্কের কথায়, ক্যাসি তাঁকে সাহায্য করতে পারেননি।
ক্লার্কের ভাষ্য অনুযায়ী, পরে ডিডি ফিরে এসে জানতে চান তিনি কাকে ফোন করেছিলেন। এরপর তিনি ক্লার্কের কাছ থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ক্যাসিকে ফোন করেন।
এর কিছুক্ষণ পরেই কুডিকে গাড়ি চালিয়ে আসতে দেখেন তাঁরা। ডিডি ও তাঁর দেহরক্ষী তখন কুডির গাড়ি ধাওয়া করেন, কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাঁরা পিছু হটেন।
ক্লার্কের সাক্ষ্যে আরও উঠে আসে, কুডির বাড়ি থেকে ফিরে আসার পর ডিডি তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেন, তিনি যেন কুডিকে বোঝান যে, এর পেছনে ডিডির হাত ছিল না।
ক্লার্ক জানান, এরপর তিনি এবং ক্যাসি কুডির সঙ্গে দেখা করেন এবং ডিডির বিরুদ্ধে যেন তিনি পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ না করেন, সেই অনুরোধ জানান।
ক্লার্কের সাক্ষ্যের পর আদালতে ডিডির আইনজীবীরা তাঁর স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ক্লার্ক স্বীকার করেন, এত আগের ঘটনা হওয়ায় কিছু বিষয় তাঁর মনে নেই।
এই মামলায় র্যাপার কিড কুডিও সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ক্যাসির সঙ্গে তাঁর স্বল্প সময়ের সম্পর্ক ছিল। তবে বড়দিনের ছুটির সময় তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে যায়।
মামলার শুনানিতে সরকারি কৌঁসুলি মিৎজি স্টেইনার ক্লার্ককে ২০০৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডিডির সঙ্গে তাঁর কাজের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করেন। ক্লার্ক জানান, কর্মজীবনের শুরুতে ডিডি তাঁকে মধ্যাহ্নভোজনের জন্য সেন্ট্রাল পার্কে নিয়ে যান এবং তাঁর অতীতের কাজের বিষয়ে জানতে চান।
ক্লার্কের দাবি, ডিডি তাঁকে বলেছিলেন, আগের কাজের জন্য যদি কোনো সমস্যা হয়, তবে তিনি তাঁকে মেরে ফেলবেন।
আদালতে আরও জানানো হয়, ক্লার্কের কাছে একবার হীরার গয়না হারিয়ে গেলে, ডিডি তাঁকে পাঁচ দিন ধরে লাই ডিটেক্টর টেস্ট করতে বাধ্য করেন।
উল্লেখ্য, ডিডির বিরুদ্ধে ওঠা এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর ১৫ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস