বিখ্যাত মার্কিন র্যাপার ও সঙ্গীত প্রযোজক শন “ডিডি” কম্বসের বিরুদ্ধে ওঠা গুরুতর অভিযোগগুলো নিয়ে বর্তমানে ফেডারেল আদালতে বিচার চলছে। ডিডির বিরুদ্ধে যৌন পাচার, পতিতাবৃত্তি, অপহরণ, অগ্নিসংযোগ, জোরপূর্বক শ্রম এবং আরও অনেক গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এরই মধ্যে, ডিডির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আসা কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির জবানবন্দি বর্তমানে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আসুন, তাদের সাক্ষ্য এবং ডিডির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সাক্ষীদের মধ্যে সবার আগে রয়েছেন ক্যাসিন্ড্রা ভেন্টুরা, যিনি একসময় ডিডির সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন এবং তাঁর ‘ব্যাড বয়’ রেকর্ড লেবেলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ক্যাসির সাক্ষ্য অনুযায়ী, ২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে ডিডি তাকে শারীরিক নির্যাতন, হুমকি ও ব্ল্যাকমেইল করতেন। ডিডি তাকে বিভিন্ন হোটেলে পুরুষ এসকর্টদের সঙ্গে “ফ্রিক অফস” নামক মাদক-নেশা-যুক্ত যৌন কার্যকলাপে অংশ নিতে বাধ্য করতেন।
ক্যাসির ভাষ্যমতে, তিনি কার্যত কোনো “না” বলার সুযোগ পেতেন না। ২০১৬ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি হোটেলে ডিডি তাকে মারধর করেন, যা সেখানকার নিরাপত্তা ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল।
এছাড়া, ২০১৮ সালে ডিডি তাকে ধর্ষণ করেন বলেও অভিযোগ করেন ক্যাসিন্ড্রা। ডিডির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে র্যাকেটিং ষড়যন্ত্র, যৌন পাচার ও পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে নারী পাচারের মতো গুরুতর বিষয়গুলো ক্যাসির এই সাক্ষ্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
তবে, ডিডির আইনজীবীরা ক্যাসির এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ডিডি এবং ক্যাসির মধ্যেকার সম্পর্ক ছিল পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে এবং সহিংসতার কারণ ছিল ডিডির মাদক ও মদের প্রতি আসক্তি।
আরেকজন সাক্ষী হলেন “জেন” নামের এক নারী, যিনি ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ডিডির সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন।
জেন জানান, ডিডি তাকে মাদক-নেশা-যুক্ত অবস্থায় অন্য পুরুষদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করতেন। জেন এই ধরনের কার্যকলাপকে “হোটেল নাইট” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি আরও জানান, ডিডি তাকে আর্থিক সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিতেন এবং তাঁর সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য এই ধরনের কাজে রাজি হতে হতো।
জেনের ভাষ্যমতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং টার্কস ও কেইকোস-এ এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে পুরুষদের আনা হতো।
জেন আরও জানান, ডিডি তাকে মাদক সরবরাহ করতেন। ডিডির বিরুদ্ধে র্যাকেটিং ষড়যন্ত্র, যৌন পাচার ও পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে নারী পাচারের অভিযোগের ক্ষেত্রে জেনের সাক্ষ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ডিডির আইনজীবীরা জানিয়েছেন, জেন স্বেচ্ছায় এসব যৌন সম্পর্কে জড়িত ছিলেন।
এছাড়াও, মিয়া নামের একজন নারী, যিনি ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ডিডির ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন, তিনি ডিডির বিরুদ্ধে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন।
মিয়ার ভাষ্যমতে, ডিডি তাকে বিভিন্ন সময়ে মারধর করতেন এবং তাঁর কাজের পরিবেশ ছিল খুবই বিশৃঙ্খল ও ভীতিকর। ডিডি তার ব্যক্তিগত জীবনকে ব্যবহার করে তাকে চুপ থাকতে বাধ্য করতেন।
মিয়ার অভিযোগ, ডিডির বিরুদ্ধে আনা জোরপূর্বক শ্রমের অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে, ডিডির আইনজীবীরা মিয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
অন্যান্য সাক্ষীদের মধ্যে রয়েছেন র্যাপার কিড কুডি।
তিনি জানিয়েছেন, ডিডি তাঁর সাবেক প্রেমিকা ক্যাসির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার কারণে তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর ও তাঁর পোর্শে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। কিড কুডি মনে করেন, এর পেছনে ডিডির হাত ছিল।
এছাড়া, ক্যাপিকর্ন ক্লার্ক নামের এক নারী, যিনি ২০০৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে ডিডির সঙ্গে কাজ করেছেন, তিনি জানান, ২০১১ সালে ডিডি তাঁকে অপহরণ করে কিড কুডিকে “খুন করতে” নিয়ে গিয়েছিলেন।
ক্লার্ক আরও জানান, ডিডি তাঁকে দিয়ে মাদক আনাতেন এবং ক্যাসির ওপর হওয়া নির্যাতনও তিনি দেখেছেন। ডিডির বিরুদ্ধে আনা অপহরণের অভিযোগের সঙ্গে ক্লার্কের সাক্ষ্য সম্পর্কিত।
এছাড়াও, ২০১৬ সালে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের নিরাপত্তা কর্মকর্তা এডি গার্সিয়া সাক্ষ্য দেন। তিনি জানান, ক্যাসির ওপর হামলার ভিডিও ধারণ করা ফুটেজ সরিয়ে ফেলার জন্য ডিডি তাকে এক লক্ষ ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন।
ডিডির বিরুদ্ধে আসা এই অভিযোগগুলো বর্তমানে আদালতে প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে। মামলার রায় কী হয়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন