যুদ্ধজয়ী নারী: দিদিমার অজানা বিপ্লবী জীবন!

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইতালির এক নারীর গল্প, যিনি ফ্যাসিবাদ থেকে বাঁচতে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। তাঁর উত্তরসূরি, লেখক সুজান কোপ, নিজের ঠাকুরমার জীবন এবং সেই সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করেছেন।

ইতালির ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর ঠাকুরমার সংগ্রাম, নারীর অধিকারের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা, এবং এই সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে লেখকের নিজের জীবনবোধের উন্মোচন – এই সবকিছু নিয়েই আজকের আলোচনা।

১৯২০-এর দশকে ইতালিতে মুসোলিনীর ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম হয়। এই সময়কালে, মেয়েদের শিক্ষা, চাকরি এবং এমনকি প্রজনন ক্ষমতার ওপরও নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল।

সুজানের ঠাকুরমা, আসুন্তা মারিয়া (পরে যিনি সুজান নামে পরিচিত হন) এবং তাঁর পরিবার, এই দমবন্ধ করা পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে আমেরিকায় পাড়ি জমান।

আমেরিকার মুক্ত পরিবেশে এসেও সুজানের ঠাকুরমা তাঁর অতীতের কথা ভোলেননি। তিনি সবসময় নারীর অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, ইতালিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের কথা জানতে পারেন তিনি। এই ঘটনাগুলো তাঁর ভেতরের মানুষটিকে আরও বেশি আলোড়িত করে তোলে।

সুজানের গবেষণা থেকে জানা যায়, ইতালিতে নারীদের ওপর কত কঠোর নিয়মকানুন ছিল। মেয়েদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত করা হয়েছিল, কিছু পেশায় নারীদের কাজ করতে বাধা দেওয়া হতো এবং সন্তান জন্মদানের জন্য উৎসাহিত করা হতো।

এমনকি, যারা এই অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন, তাঁদের কারারুদ্ধ করা হতো।

সুজানের ঠাকুরমা ছিলেন গভীর সংবেদনশীল মনের মানুষ। অন্যদের প্রতি সহানুভূতি ছিল তাঁর সহজাত বৈশিষ্ট্য।

ইতালীয় ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল, যা তাঁকে তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছিল। সুজানের ভাষায়, “আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমার ঠাকুরমা কেন ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি কেবল আমেরিকার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকেই যাননি, বরং ফ্যাসিবাদী শাসনের অন্ধকার থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন।”

সুজান কোপ-এর নতুন বই ‘ওম্যান অফ ওয়ার’-এ এই সময়ের নারীদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের কথা তুলে ধরা হয়েছে। লেখক মনে করেন, তাঁর ঠাকুরমার জীবন এবং এই সময়ের নারীদের আত্মত্যাগ, তাঁকে নতুন করে উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে।

এই নারীরা তাঁদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন, তাঁদের আত্মত্যাগের মাধ্যমেই স্বাধীনতার জন্ম হয়েছিল।

তথ্যসূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *