ডিজিটাল মানুষ: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক নতুন দিগন্ত?
বর্তমানে সারা বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)-এর জয়জয়কার। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রায়ও এসেছে পরিবর্তন। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)-এর দৌলতে তৈরি হচ্ছে ডিজিটাল মানুষ, যা মানুষের সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে ও যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। সম্প্রতি এই ধরনের ডিজিটাল মানুষের ধারণা প্রযুক্তি বিশ্বে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
যুক্তরাজ্যের একটি স্টার্টআপ তৈরি করেছে ডেক্স নামের একজন ডিজিটাল ডিজে এবং মডেলকে। ডেক্স দেখতে যেমন একজন সাধারণ মানুষ, তেমনই তার রয়েছে নিজস্ব রুচি এবং ফ্যাশন সচেতনতা। সে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার অনুসারীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে।
ডেক্সের পোশাক থেকে শুরু করে তার নাচের মুদ্রা—সবকিছুই তৈরি করা হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। জানা গেছে, এই ডিজিটাল মানুষটিকে তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘আনরিয়াল ইঞ্জিন’ নামক একটি থ্রিডি মডেলিং সফটওয়্যার, যা ভিডিও গেম তৈরিতে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়।
শুধু বিনোদন জগতেই নয়, গ্রাহক পরিষেবা এবং তথ্য আদান-প্রদানেও ডিজিটাল মানুষের ব্যবহার বাড়ছে। ‘সাম ভাইভাস’ নামক একটি কোম্পানি তৈরি করেছে শেলি নামের একটি ডিজিটাল অবতার, যা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পণ্যের তথ্য সরবরাহ করে। এছাড়াও, আরিফ নামের একটি ডিজিটাল মানুষ তৈরি করা হয়েছে, যা বিমানবন্দরের যাত্রীদের দিকনির্দেশনা দিতে এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডিজিটাল মানুষের ধারণা AI প্রযুক্তিকে মানুষের কাছে আরও সহজবোধ্য করে তুলবে। এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে AI-এর প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দ্বিধা দূর হবে।
তবে, প্রযুক্তির এই দ্রুত অগ্রগতির সাথে সাথে কিছু উদ্বেগও দেখা যাচ্ছে। অনেকের মতে, AI-এর ব্যবহার মানুষের কর্মসংস্থান কমিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে, যে কাজগুলো বর্তমানে মানুষ করে, সেগুলো হয়তো ভবিষ্যতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হবে।
অন্যদিকে, ডিজিটাল মানুষ তৈরির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, এই খাতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। তারা মনে করেন, ডিজিটাল মানুষ মানুষের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে এবং কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করবে।
এই মুহূর্তে, গুগল তাদের বার্ড চ্যাটবটকে (বর্তমানে জেমিনি নামে পরিচিত) আরও উন্নত করার চেষ্টা করছে। এছাড়া, মাইক্রোসফট তাদের ‘আজুর’ সফটওয়্যার ব্যবহারকারীদের জন্য লাইফলাইক অবতার তৈরির সুযোগ করে দিচ্ছে, যা টেক্সট থেকে অ্যানিমেটেড স্পিচ তৈরি করতে পারবে।
ডিজিটাল মানুষের ধারণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতে এর ব্যবহার আরও বাড়বে এবং মানুষের জীবনযাত্রায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন