ঘুমের সমস্যা সমাধানে ডিজিটাল চিকিৎসা: বিপ্লব আনছে স্বাস্থ্য প্রযুক্তি!

ঘুমের সমস্যা সমাধানে ডিজিটাল থেরাপি: নতুন দিগন্তের সূচনা।

বর্তমানে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসা ব্যবস্থায় নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। ডিজিটাল থেরাপি বা প্রযুক্তি নির্ভর চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, যা আগে হয়তো কল্পনাই করা যেত না।

সম্প্রতি, ঘুমের সমস্যা (Insomnia) সমাধানে ডিজিটাল থেরাপির ব্যবহার বাড়ছে, যা প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসেবে উঠে এসেছে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেস (NHS)-এর মতো স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোও এখন এই ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর চিকিৎসার উপর জোর দিচ্ছে।

২০২২ সালের মে মাসে, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড কেয়ার এক্সিলেন্স (NICE) ঘুমের সমস্যা নিরাময়ে ডিজিটাল থেরাপি ব্যবহারের সুপারিশ করে। তারা জানায়, ঘুমের সমস্যা কমাতে ঘুমের ওষুধগুলির বিকল্প হিসেবে ‘স্লিপিও’ (Sleepio)-এর মতো ডিজিটাল থেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে।

স্লিপিও হলো একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, যা ব্যবহারকারীদের ঘুমের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এটি মূলত প্রমাণ-ভিত্তিক জ্ঞানীয় আচরণগত থেরাপি (Cognitive Behavioural Therapy/ CBT) কৌশল ব্যবহার করে, যা ঘুমের সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য খুবই কার্যকর।

ঘুমের সমস্যা বর্তমানে একটি ব্যাপক সমস্যা। যুক্তরাজ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অনিদ্রায় ভোগেন। এই সমস্যার সমাধানে সাধারণত ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়।

তবে দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের ওষুধ সেবনের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। ডিজিটাল থেরাপি এক্ষেত্রে একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প হতে পারে। কারণ, এটি সরাসরি সমস্যাটির সমাধানে কাজ করে এবং ওষুধের উপর নির্ভরশীলতা কমায়।

ডিজিটাল থেরাপির ধারণাটি নতুন হলেও, এর কার্যকারিতা নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক গবেষণা হয়েছে। স্লিপিও-এর ক্ষেত্রে, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ঘুমের সমস্যাগ্রস্ত রোগীদের মধ্যে লক্ষণগুলি কমাতে ৭৬ শতাংশ পর্যন্ত সফল হয়েছে।

এটি মূলত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের (Clinical Trial) মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল থেরাপির মূল বৈশিষ্ট্য হলো, এটি রোগীর বাড়িতে বসেই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

কোভিড-১৯ অতিমারীর সময় ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সে সময় ভার্চুয়াল মেডিসিন এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ে, যা ডিজিটাল থেরাপির গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়িয়ে তোলে।

আগে যেখানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের (Video Conferencing) মতো প্রযুক্তি খুব একটা ব্যবহার হতো না, সেখানে এখন এটি একটি স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে, অনেক হাসপাতালেই রোগীদের সাথে ডাক্তারদের অনলাইন পরামর্শের ব্যবস্থা রয়েছে।

ডিজিটাল থেরাপির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার সুযোগ পান। তাছাড়াও, এটি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং সেই সম্পর্কিত কুসংস্কার দূর করতে সহায়তা করে।

ভবিষ্যতে, ভার্চুয়াল ও অগমেন্টেড রিয়েলিটির (Virtual and Augmented Reality) মতো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ফোবিয়া (Phobia)-এর মতো সমস্যাগুলোরও ডিজিটাল থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।

তবে, ডিজিটাল থেরাপি সহজলভ্য হলেও, এর কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের (Clinical Trial) মাধ্যমে ডিজিটাল থেরাপির কার্যকারিতা প্রমাণ করতে হয়।

বর্তমানে, ডিজিটাল থেরাপি মানসিক স্বাস্থ্যসেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। এটি একদিকে যেমন রোগীদের জন্য সুবিধা নিয়ে আসে, তেমনি স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্যেও একটি কার্যকর সমাধান।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *