আতঙ্কের জন্ম: ডাইনোসর খেকো ‘ভয়ংকর কুমির’ রহস্য ফাঁস!

**ডাইনোসর শিকারি ‘ত্রাস কুমির’ : কীভাবে জন্ম হলো এক দানবের?**

আফ্রিকা মহাদেশের আকারের একটি বিশাল জলপথ, যা একসময় উত্তর আমেরিকাকে বিভক্ত করে রেখেছিল, সেই সময়ের এক ত্রাস সৃষ্টিকারী প্রাণী ছিল *ডাইনোসুকাস*।

আকারে বাসের সমান, দাঁতগুলো ছিল একটি কলার আকারের—আজ থেকে প্রায় ৭ কোটি বছর আগে, ক্রিটেসিয়াস যুগে, এই “ত্রাস কুমির” জলভাগে রাজত্ব করত।

সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা এই বিলুপ্তপ্রায় সরীসৃপটির বিবর্তন এবং জীবনযাত্রা সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য আবিষ্কার করেছেন।

জার্মানির ইউনিভার্সিটি অফ টিউবিংগেন এবং নিউ ইয়র্কের ফোর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটির গবেষকদের একটি দল *ডাইনোসুকাস* সম্পর্কে নতুন গবেষণার মাধ্যমে এর বিবর্তনগত রহস্য উন্মোচন করেছেন।

আগে ধারণা করা হতো, *ডাইনোসুকাস* কুমিরের একটি প্রজাতি (প্রায়শই একে ‘বিশাল কুমির’ হিসেবে উল্লেখ করা হতো), কিন্তু নতুন বিশ্লেষণ সেই ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে।

*কমিউনিকেশনস বায়োলজি* জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, *ডাইনোসুকাস*-এর লবণাক্ত জল সহ্য করার ক্ষমতা ছিল, যা আধুনিক কুমিরের নেই।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর কারণ হলো বিশেষ লবণ গ্রন্থি, যা অতিরিক্ত সোডিয়াম ক্লোরাইড অপসারণ করতে সহায়তা করত।

এই বৈশিষ্ট্যটি *ডাইনোসুকাস*-কে বিশাল অভ্যন্তরীণ জলপথে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে, যা উত্তর আমেরিকাকে দুটি অংশে বিভক্ত করেছিল—লারামিডিয়া এবং অ্যাপালাচিয়া।

গবেষকরা জীবাশ্ম বিশ্লেষণ এবং আধুনিক কুমিরের ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, *ডাইনোসুকাস* আসলে কুমিরের প্রজাতিগুলোর একটি বিশেষ শাখা।

এর লবণাক্ততা সহনশীলতার ক্ষমতা এটিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছে।

এর ফলে এরা উপকূলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে প্রচুর পরিমাণে শিকার পাওয়া যেত, বিশেষ করে ডাইনোসর।

এই কারণেই *ডাইনোসুকাস* একটি শক্তিশালী শিকারি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

গবেষক দলের প্রধান, ড. মার্টন রাবি (ইউনিভার্সিটি অফ টিউবিংগেন) সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “এই জলাভূমিগুলোতে *ডাইনোসুকাস*-এর আশেপাশে কেউ নিরাপদ ছিল না।”

তিনি আরও জানান, “আমরা একটি বিশাল প্রাণীর কথা বলছি, যার শরীরের দৈর্ঘ্য সম্ভবত ৮ মিটারের (২৬ ফুট) বেশি ছিল।”

আর্লিগেটরদের (alligatoroids) তুলনায় *ডাইনোসুকাস* ছিল ব্যতিক্রম।

আর্লিগেটররা সাধারণত স্বাদুপানিতে বাস করে, কিন্তু *ডাইনোসুকাস* লবণাক্ত জল সহ্য করতে পারত।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ভিন্নতা সম্ভবত বিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা তাদের টিকে থাকতে সাহায্য করেছে।

ফোর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটির জীববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. ইভন হেক্কালা বলেছেন, *ডাইনোসুকাস*-কে কুমিরের পরিবার গাছের একটি ভিন্ন শাখায় স্থাপন করাটা বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনের সঙ্গে এর অভিযোজনকে আরও ভালোভাবে তুলে ধরে।

তিনি আরও যোগ করেন, “এই গবেষণাপত্রটি এই অসাধারণ প্রাণীর বিবর্তন এবং পরিবেশগত ভূমিকার উপর আলোকপাত করে।”

*ডাইনোসুকাস*-এর আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আমাদের অতীতের প্রাণীজগতের জটিলতা এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বিষয়ে নতুন ধারণা দেয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *