ডাইনোসর জীবাশ্ম: ফ্রান্সে খনন নিয়ে বিতর্ক, কারা পাবে অনুমতি?

ফ্রান্সে ডাইনোসরের জীবাশ্ম: খননকার্যের অধিকার নিয়ে বিতর্ক।

পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশ ফ্রান্সে (France) ডাইনোসরের (dinosaur) জীবাশ্ম (fossil) খুঁজে বের করার অধিকার কার, তা নিয়ে বর্তমানে বিতর্ক চলছে। একদিকে আছেন পেশাদার জীবাশ্মবিদরা (paleontologists), অন্যদিকে শখের বশে জীবাশ্ম সংগ্রহকারীরা (amateur collectors)।

এই দুই পক্ষের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব এখন বেশ তীব্র রূপ নিয়েছে, কারণ ফ্রান্সে প্রত্নতাত্ত্বিক (paleontological) সম্পদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ব্যাপারটা আসলে কী? কয়েক বছর আগেও ফ্রান্সে, বিশেষ করে মার্সেই (Marseille) অঞ্চলের কাছাকাছি এলাকায়, শখের বশে অনেকে ডাইনোসরের জীবাশ্ম খোঁজার কাজ করতেন।

এই কাজটি করতে গিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারও হয়েছে। যেমন, অ্যানি মেচিন (Annie Méchin) ও তাঁর স্বামী প্যাট্রিক মেচিন (Patrick Méchin) নামের এক দম্পতি কয়েক বছর আগে একটি ছোট হাড়ের টুকরো খুঁজে পান।

তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের কাজ করছেন এবং তাঁদের এই আবিষ্কারের ফলে উৎসাহিত হয়েছেন। তাঁদের মতে, এটি ছিল তাঁদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ।

তাঁদের এই আবিষ্কারের ফলে এলাকার বিজ্ঞানীরাও উৎসাহিত হয়েছিলেন।

কিন্তু ফ্রান্স সরকার (French government) চাইছে, এই ধরনের জীবাশ্ম খোঁজার কাজে কিছু নিয়ন্ত্রণ আনতে।

সরকারের মতে, অনেক সময় শখের বশে কাজ করতে গিয়ে মূল্যবান জীবাশ্ম পাচার হয়ে যায়, যা আন্তর্জাতিক বাজারে (international market) চড়া দামে বিক্রি হয়।

ফ্রান্সের বিজ্ঞানীরা (scientists) মনে করেন, এর ফলে দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অন্যদিকে, শখের জীবাশ্ম সংগ্রহকারীরা বলছেন, তাঁরা বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি মেনে কাজ করেন এবং তাঁদের আবিষ্কারগুলি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় (scientific research) কাজে লাগে।

তাঁদের মতে, ফ্রান্সে পেশাদার জীবাশ্মবিদদের (professional paleontologists) পক্ষে সব সময় নতুন জীবাশ্ম খুঁজে বের করা সম্ভব হয় না, তাই তাঁরা এই কাজটি করে থাকেন।

তাছাড়া, তাঁদের সংগ্রহ করা অনেক জীবাশ্ম বিভিন্ন জাদুঘরে (museums) সংরক্ষিত আছে, যা জনসাধারণের (public) জন্য উন্মুক্ত।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ফ্রান্সে ডাইনোসরের জীবাশ্ম আবিষ্কারের একটা দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে (18th century) প্রথম এই ধরনের জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর ১৯৫০-এর দশকে মঁতাইন সেন্ট-ভিকtoire (Montagne Sainte-Victoire) অঞ্চলে ডাইনোসরের ডিমের (dinosaur eggs) সন্ধান পাওয়ার পরে এই বিষয়ে আগ্রহ আরও বাড়ে।

এই ঘটনার পর ঐ এলাকায় অনেকে ডাইনোসরের ডিম খুঁজতে শুরু করেন। এমনকি, একটা সময়ে ডিমগুলি কয়েক হাজার ফ্রাঁ-তে (franc) বিক্রি হতো, যা আজকের দিনে কয়েকশো ইউরোর (euro) সমান।

এর প্রতিক্রিয়ায় কর্তৃপক্ষ এই অঞ্চলে খননকার্য (excavation) বন্ধ করে দেয় এবং এলাকাটিকে একটি সংরক্ষিত অঞ্চল (nature reserve) ঘোষণা করে।

কিন্তু, এই নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও ডাইনোসরের ডিমের সন্ধান অব্যাহত থাকে।

এমনকী, ২০০০ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে, শুধুমাত্র একটি জায়গায় প্রায় ৫০০টির মতো ডিম পাওয়া গিয়েছিল।

এমনকী, ২০১৬ সালে প্যারিসের একটি নিলামে (auction) একটি ‘অ্যাপাটোসরস’-এর (Apatosaurus) কঙ্কাল ৬ মিলিয়ন ডলারে (dollar) বিক্রি হয়েছিল।

আবার, ২০২৩ সালে ‘টি-রেক্স’ (T-rex) প্রজাতির একটি ডাইনোসরের কঙ্কাল ৫.৪ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়।

বর্তমানে, ফ্রান্সে জীবাশ্ম খনন নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তার মূল কারণ হল কে এই কাজ করবে, পেশাদাররা নাকি শখের বশে সংগ্রহকারীরা।

সরকার চাইছে, এই বিষয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আনতে, যাতে জীবাশ্ম পাচার বন্ধ করা যায় এবং দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য রক্ষা করা যায়।

কিন্তু, শখের সংগ্রহকারীরা মনে করেন, এর ফলে নতুন আবিষ্কারের সম্ভাবনা কমে যাবে। তাঁদের মতে, এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রত্নতত্ত্বের (paleontology) অগ্রগতিকে ব্যাহত করবে।

নরম্যান্ডিতে (Normandy) এই পরিস্থিতি আরও জটিল।

কারণ, এখানকার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা থেকে স্থানীয়রা বহু বছর ধরে জীবাশ্ম সংগ্রহ করে আসছেন।

সরকার যদি এখানে খননকার্য বন্ধ করে দেয়, তাহলে তাঁরা তাঁদের ঐতিহ্য থেকে বঞ্চিত হবেন।

তবে, এই বিতর্কের মধ্যে আশার আলো দেখা যায়, যখন দেখা যায়, কিছু শখের জীবাশ্ম সংগ্রাহক বিজ্ঞানসম্মতভাবে কাজ করেন এবং তাঁদের আবিষ্কারগুলি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় সাহায্য করে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *