স্কটল্যান্ডের একটি দ্বীপে, বনি প্রিন্স চার্লির আশ্রয়স্থলে বিশাল আকারের ডাইনোসরের পায়ের ছাপ খুঁজে পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এই বিরল আবিষ্কার করেছেন, যা প্রায় ১৬ কোটি ৭০ লক্ষ বছর আগের।
এই আবিষ্কার শুধু বিজ্ঞানীদের কৌতূহলই বাড়ায়নি, বরং স্কটিশ ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে এর সংযোগ স্থাপন করেছে।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ১৭৪৬ সালে কুলোডেনের যুদ্ধে পরাজয়ের পর বনি প্রিন্স চার্লি স্কাই দ্বীপে আশ্রয় নিয়েছিলেন। গবেষকরা এখন বলছেন, একসময় যেখানে প্রিন্স চার্লি আত্মগোপন করেছিলেন, সেই স্থানটিতেই ছিল মাংসাশী ডাইনোসর মেগালোসরাস এবং বিশাল তৃণভোজী সরোপডের বিচরণক্ষেত্র।
ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবার্গের গবেষক টোন ব্লেকসলি-র নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা স্কাই দ্বীপের পাথুরে সমুদ্র সৈকতে ১৩১টি জীবাশ্ম পায়ের ছাপ বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা ড্রোন ব্যবহার করে ঐ এলাকার হাজার হাজার ছবি তুলে সেগুলোকে থ্রিডি মডেলে রূপান্তর করেছেন।
এই মডেলগুলো ডাইনোসরদের চলাচলের পথ এবং তাদের পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা পেতে সাহায্য করে। ব্লেকসলি বলেন, “পায়ের ছাপগুলো সাধারণত ক্ষয়প্রাপ্ত, তবে কিছু অসাধারণ উদাহরণ পাওয়া গেছে যা এই ডাইনোসরদের সম্পর্কে অনেক তথ্য প্রকাশ করে।
এই আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীরা জানতে পারছেন, জুরাসিক যুগের মাঝামাঝি সময়ে ডাইনোসররা কীভাবে তাদের পরিবেশে মিশে গিয়েছিল। প্রায় ৪৫ সেন্টিমিটার লম্বা মেগালোসরাসের পায়ের ছাপগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মেগালোসরাস ছিল টি-রেক্সের পূর্বপুরুষ এবং ধারালো, বাঁকানো নখরযুক্ত এক মাংসাশী প্রাণী। এছাড়াও, বিজ্ঞানীরা গোল আকারের সরোপডের পায়ের ছাপও খুঁজে পেয়েছেন, যা আগে মাছের বাসস্থান বলে ভুল করা হতো।
গবেষকরা মনে করেন, এই অঞ্চলে আরও অনেক পায়ের ছাপ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওন্টোলজি ও বিবর্তন বিভাগের অধ্যাপক স্টিভ ব্রুসাত্তে বলেন, “বনি প্রিন্স চার্লি যখন ইংরেজ সৈন্যদের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, তখন সম্ভবত তিনি ডাইনোসরদের পায়ের চিহ্ন অনুসরণ করছিলেন।
তিনি তো তখন জানতেন না যে ডাইনোসর কী, কারণ সেই সময়ে এই শব্দটি তৈরিই হয়নি। তবে তিনি যদি পাথরের ওপর এই বিশাল গর্তগুলো দেখতেন, তাহলে হয়তো ভাবতেন এগুলো কিসের ছাপ!”
এই আবিষ্কার মধ্য-জুরাসিক যুগের ডাইনোসরদের জীবনযাত্রা এবং তাদের পরিবেশ সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বিজ্ঞানীরা এখন এই অঞ্চলের অন্যান্য জীবাশ্মগুলো নিয়ে আরও গবেষণা চালাচ্ছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান