ইতালিতে শ্রম শোষণের শিকারদের জন্য ২.৩ মিলিয়ন ডলার দেবে ডায়র!

ডায়র-এর বিরুদ্ধে শ্রমিক শোষণের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২.৩ মিলিয়ন ডলার দিতে রাজি ফ্যাশন ব্র্যান্ডটি।

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ফ্যাশন ব্র্যান্ড ডায়র, শ্রমিক শোষণের অভিযোগের মীমাংসা করতে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ২৬ কোটি টাকার বেশি দিতে রাজি হয়েছে। ইতালির প্রতিযোগিতা বিরোধী কর্তৃপক্ষ একটি তদন্তের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়।

জানা গেছে, ব্র্যান্ডটি তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে শ্রমিকদের সঙ্গে হওয়া প্রতারণার বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়েছিল।

প্রতিযোগিতা বিরোধী কর্তৃপক্ষ বুধবার জানায়, এলভিএমএইচ-এর মালিকানাধীন ডায়রের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো সম্ভাব্য অবৈধ কাজের প্রতিকার হিসেবে উপযুক্ত। এই কারণে তারা কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তদন্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ডায়রের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের ২ মিলিয়ন ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৩ কোটি টাকা) আগামী পাঁচ বছরে শ্রম শোষণের শিকার হওয়া শ্রমিকদের সহায়তার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগে ব্যয় করা হবে।

মিলানের কৌঁসুলিরা গত বছর এমন কিছু কর্মশালা আবিষ্কার করেন যেখানে কম বেতনে শ্রমিকরা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছিলেন। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন অবৈধভাবে ইতালিতে বসবাসকারী অভিবাসী।

এই শ্রমিকরা ডায়র এবং আরমানির মতো ব্র্যান্ডের জন্য চামড়ার ব্যাগ তৈরি করতেন, যা তাদের খুচরা মূল্যের তুলনায় খুবই সামান্য পারিশ্রমিকে বিক্রি হতো।

ইতালির অ্যান্টিট্রাস্ট তদন্তকারীরা এরপর এই বিষয়টির ওপর আলোকপাত করেন যে, বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো তাদের কারুশিল্প এবং কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়ে ভোক্তাদের কাছে ভুল বার্তা দিয়েছে কিনা।

কারণ, শ্রমিকদের সঙ্গে হওয়া আসল ঘটনা তাদের প্রচারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না।

ডায়র তাদের সরবরাহকারীদের নির্বাচন ও তাদের কার্যক্রমের ওপর নজরদারির ক্ষেত্রে আরও কঠোর পদ্ধতি অনুসরণ করতে রাজি হয়েছে। এছাড়াও, ব্র্যান্ডটি তাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা বিষয়ক বিবৃতিগুলোতেও পরিবর্তন আনবে।

ডায়রের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে তদারকি জোরদার করতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।”

ইতালির ভোক্তা অধিকার সংস্থা, কোডাকন (Codacons), এই মীমাংসাকে খুব দুর্বল হিসেবে অভিহিত করেছে। তাদের মতে, আর্থিক প্রতিশ্রুতির পরিমাণ খুবই কম এবং কোনো জরিমানা না হওয়ায় এটি যথেষ্ট নয়।

গত বছর কৌঁসুলিরা ডায়র এবং আরমানির ব্যাগ প্রস্তুতকারক ইউনিটগুলোর তত্ত্বাবধানের জন্য কমিশনার নিয়োগ করেছিলেন, যাতে তারা তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে। এই বিশেষ প্রশাসন ব্যবস্থাটি চলতি বছরের শুরুতে তুলে নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, গত সপ্তাহে ইতালির একটি আদালত ফ্যাশন ব্র্যান্ড ভ্যালেন্তিনোর একটি ইউনিটকে এক বছরের জন্য বিচার বিভাগীয় প্রশাসনের অধীনে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। কারণ, তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে শ্রমিক শোষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এই ঘটনাগুলো বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন শিল্পের শ্রমিক অধিকার এবং নৈতিক ব্যবসার গুরুত্বকে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পও (RMG) এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে।

এই ধরনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে, আমাদের দেশের পোশাক শিল্পে স্বচ্ছতা, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা এবং একটি ন্যায্য কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। একইসঙ্গে, ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে এবং নৈতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে এমন পণ্য কেনায় উৎসাহিত করতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *