বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে, সম্প্রতি একটি মার্কিন গবেষণা ফল ও সবজির কীটনাশক ব্যবহারের মাত্রা নিয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে। এনভায়রনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ (EWG) নামক একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা প্রতি বছর “শপার্স গাইড টু পেস্টিসাইডস ইন প্রোডিউস” নামে একটি তালিকা প্রকাশ করে থাকে। এই তালিকায় ফল ও সবজিতে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়।
এই বছর প্রকাশিত তালিকায় কিছু পরিচিত ফল ও সবজির পাশাপাশি নতুন কিছু বিষয় যোগ হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে ১২টি ফল ও সবজিতে ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এই তালিকায় ‘ডার্টি ডজন’ বা “নোংরা” তালিকায় স্থান পাওয়া ফল ও সবজিগুলো হলো— পালং শাক, স্ট্রবেরি, কালে, আঙুর, পীচ, চেরি, নেকটারিন, নাশপাতি, আপেল, ব্ল্যাকবেরি, ব্লুবেরি এবং আলু। এই বছর ব্ল্যাকবেরি এবং আলু নতুন করে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্য তালিকায় ফল ও সবজির গুরুত্ব অপরিসীম। তবে কীটনাশকের ব্যবহার স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়।
বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব মারাত্মক হতে পারে। কীটনাশকের কারণে শিশুদের শরীরে স্নায়ু-সংক্রান্ত সমস্যা এবং মনোযোগের অভাব দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কীটনাশকের সংস্পর্শ ভ্রূণের বৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
অন্যদিকে, ‘ক্লিন ফিফটিন’ বা “পরিষ্কার” তালিকায় স্থান পাওয়া ফল ও সবজিগুলোতে কীটনাশকের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম পাওয়া গেছে।
এই তালিকায় রয়েছে— আনারস, মিষ্টি ভুট্টা, অ্যাভোকাডো, পেঁপে, পেঁয়াজ, মটরশুঁটি (frozen), শতমূলী, বাঁধাকপি, তরমুজ, ফুলকপি, কলা, আম, গাজর, মাশরুম এবং কিউই ফল।
EWG-এর এই গবেষণা খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে। তারা ভোক্তাদের কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করে।
কীটনাশকের প্রভাব কমাতে ফল ও সবজি খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (FDA) এর পরামর্শ অনুযায়ী, ফল ও সবজি খাওয়ার আগে ১৫-২০ সেকেন্ড পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে।
শক্ত ফল ও সবজি যেমন— গাজর, শসা, তরমুজ এবং আলু পরিষ্কার করার জন্য একটি ব্রাশ ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্যান্য ফল ও সবজি হালকাভাবে ঘষে ধুতে হবে।
তবে, অনেক সময় রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক দেখা যায়। খাদ্য ও পানীয় প্রস্তুতকারকদের একটি সংগঠন, অ্যালায়েন্স ফর ফুড অ্যান্ড ফার্মিং (Alliance for Food and Farming) মনে করে, ফল ও সবজি উৎপাদনে কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা উচিত নয়।
তাদের মতে, কীটনাশক ব্যবহার করা হলেও, খাদ্যদ্রব্য নিরাপদ থাকে।
বাংলাদেশেও খাদ্য নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাজারে উপলব্ধ ফল ও সবজি পরীক্ষা করে কীটনাশকের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
ভোক্তাদের সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: সিএনএন