আতঙ্ক! আপনার ডিএনএ ডেটা বিক্রি হচ্ছে, গোপন তথ্য ফাঁস?

যুক্তরাষ্ট্রের একটি জনপ্রিয় জেনেটিক টেস্টিং কোম্পানি, 23andMe, দেউলিয়া হওয়ার জন্য আবেদন করেছে। এর ফলে কোম্পানিটি তাদের গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।

এই খবরে সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও তাদের জেনেটিক ডেটার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

23andMe মূলত তাদের গ্রাহকদের বাড়িতে বসে ডিএনএ পরীক্ষার সুবিধা দিয়ে থাকে। বর্তমানে তাদের ১ কোটি ৫০ লক্ষ গ্রাহক রয়েছে।

এখন দেউলিয়া হওয়ার কারণে, এই বিশাল পরিমাণ গ্রাহকের জেনেটিক ডেটা অন্য কোনো সংস্থার কাছে বিক্রি হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ডেটা বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা ও গবেষকদের জন্য খুবই মূল্যবান। কারণ, এই ডেটা ব্যবহার করে স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা, ব্যক্তিগত চিকিৎসা এবং এমনকি টার্গেটেড বিজ্ঞাপন তৈরি করাও সম্ভব।

জেনেটিক ডেটা একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্য বিষয়ক পূর্বাভাস দিতে পারে, যা তাদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কেও ধারণা দিতে পারে।

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্টন স্কুলের অধ্যাপক, গিডিয়ন নাভের মতে, এই ডেটা বাজারের প্রচলিত ধারণার চেয়েও অনেক বেশি তথ্য সরবরাহ করতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, কারো খাদ্যাভ্যাস হয়তো অন্যদের জন্য কেনা খাবারের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু জেনেটিক ডেটা সেই ব্যক্তির আসল পছন্দ জানাতে সক্ষম।

এই ডেটার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হলো স্বাস্থ্য বিষয়ক পূর্বাভাস তৈরি করা।

23andMe তাদের গ্রাহকদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা সেলিয়াক ডিজিজের মতো রোগের সম্ভাবনা সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে।

স্বাস্থ্যখাতে গবেষণা এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসার উন্নতিতে এই ধরনের ডেটা খুবই সহায়ক হতে পারে।

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির স্টার্ন স্কুল অফ বিজনেসের অধ্যাপক ভাসান্ত ধর মনে করেন, এই ডেটা ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় আরও সঠিক করা যেতে পারে।

তবে, ডেটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু উদ্বেগের বিষয়ও রয়েছে।

মানুষের জেনেটিক তথ্য ব্যবহার করে তাদের প্রতি বৈষম্য করা হতে পারে।

যদিও স্বাস্থ্য বীমা বা চাকরির ক্ষেত্রে জেনেটিক তথ্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে কিছু আইন রয়েছে, তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে, যেমন— প্রতিবন্ধী বীমা বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায় বৈষম্য করার সম্ভাবনা এখনো বিদ্যমান।

অতীতেও, Ancestry.com-এর মতো জেনেটিক টেস্টিং কোম্পানি তাদের ডেটা বিক্রি করেছে।

যেহেতু জেনেটিক ডেটার কোনো মেয়াদ শেষ হয় না, তাই কোম্পানিগুলো এই ডেটা দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করতে পারে।

সেন্টার ফর জেনেটিক্স অ্যান্ড সোসাইটির সহযোগী পরিচালক কেটি হ্যাসন মনে করেন, বিজ্ঞাপনদাতারা এই ডেটা ব্যবহার করে গ্রাহকদের স্বাস্থ্যগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে টার্গেট করতে পারে, যা উদ্বেগের কারণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা সুরক্ষার বিষয়টি বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে এবং এই ধরনের ডেটার সম্ভাব্য অপব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *